সংখ্যাসূচক সমতার রহস্য

Mathematics

সংখ্যাসূচক সমতার রহস্য

কুরআন মাজিদের বিভিন্ন শব্দের সংখ্যাসূচক সম্পর্কের বিবরণ দিয়ে বহু বই ও প্রবন্ধ লিখা হয়েছে। এই সংখ্যাতাত্ত্বিক সম্পর্কের ব্যাপারে এ পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত  টানা যায় নি। তবে তা এতই অনুপম যে, কুরআন মাজিদের বিস্ময়কর প্রকৃতিতে তা নতুন ক্ষেত্রে প্রসারিত করেছে। নিন্মে কুরআন মাজিদের কিছু সংখ্যাতাত্ত্বিক সাদৃশ্যের দৃষ্টান্ত পেশ করা হল :

১. কুরআন মাজিদ বলে, সাতটি আসমান রয়েছে। কুরআন মাজিদের কেবল সাতটি সুরার মধ্যেই এই বর্ণনা পাওয়া যায়।

২. কুরআন মাজিদ বলে, আল্লাহ তাআলা কর্তৃক স্থিরীকৃত মাসের সংখ্যা হল ১২ (বারো)। ‘মাস’ শব্দের আরবি প্রতিশব্দ কুরআন মাজিদে কেবল বারো বার উল্লিখিত হয়েছে।

৩. আরবি শব্দ ‘ঈমান’ অর্থ বিশ্বাস। এই শব্দের বিপরীত শব্দ ‘কুফর’, যার অর্থ অস্বীকৃতি। কুরআন মাজিদে এই ঈমান শব্দটি ১৭ (সতের) বার দেখা যায়। বিস্ময়ের ব্যাপার হল কুরআন মাজিদে কুফর শব্দটিও এসেছে ১৭ (সতের) বার। অধিকন্তু ‘মুমিনুন’ শব্দটি কুরআন মাজিদে পাওয়া যায় ৮ (আট) স্থানে এবং ‘কাফিরুন’ শব্দটিও পাওয়া যায় ৮টি স্থানে।

৪. আরবি শব্দ ‘মালাইকা’ অর্থ ফেরেশতা এবং ‘শয়তান’ শব্দ নির্দেশ করে ইবলিশ। শব্দ দুটি তাদের বৈশিষ্ট্য ও ভূমিকার ক্ষেত্রে পরস্পর বিরোধী। কুরআন মাজিদে এই ‘মালাইকা’ শব্দটি সর্বমোট ৬৮ (আটষট্টি) বার ব্যবহৃত হয়েছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হল ‘শয়তান’ শব্দটিও কুরআন মাজিদে ৬৮ (আটষট্টি) বার ব্যবহৃত হয়েছে।

৫. আরবি শব্দ ‘দুনিয়া’ অর্থ ইহকাল এবং ‘আখিরাহ’ অর্থ পরকাল। কুরআন মাজিদে ‘দুনিয়া’ শব্দটি এসেছে ১১৫ বার। অনুরূপভাবে ‘আখিরাহ’ শব্দটিও এসেছে ১১৫ বার।

৬. আরবি শব্দ ‘ত্বীন’ অর্থ কাদা মাটি এবং ‘নুতফা’ অর্থ ‘শুক্রবিন্দু’। কুরআন মাজিদ বলে, মানুষ প্রথমে সৃষ্টি হয়েছে ‘ত্বীন’ থেকে এবং পরে ‘নুতফা’ থেকে। কুরআন মাজিদে ‘ত্বীন’ শব্দটি দেখা যায় মোট ১২ (বারো) বার। ‘নুতফা’ শব্দেরও একই অবস্থা, তাও রয়েছে ১২ (বারো) বার।

৭. আরবি শব্দ ‘ফে’ল’ মানে কাজ এবং ‘আজর’ অর্থ প্রতিদান। কুরআন মাজিদে ‘ফে’ল’ শব্দটি দেখা যায় মোট ১০৮ (একশত আট) বার। ‘আজর’ শব্দের  ক্ষেত্রেও তা সত্যি, তাও দেখা যায় ১০৮ বার।

৮. ‘রহমান’ ও ‘রহীম’ আল্লাহ তাআলার দুটি গুণবাচক নাম, উভয় শব্দই রহম, যার অর্থ দয়া- থেকে নির্গত। ‘রহমান’ এমন দয়াকে ইঙ্গিত করে যার সঙ্গে আছে ন্যায় বিচার। পক্ষান্তরে ‘রহীম’ এমন দয়াকে নির্দেশ করে যার সঙ্গে আছে ক্ষমা। কুরআন মাজিদে ‘রহমান’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে মোট ৫৭ (সাতান্ন) বার, কিন্তু ‘রাহীম’ শব্দটি দেখা যায় মোট ১১৪ (একশত চৌদ্দ) বার। যা ৫৭ (সাতান্ন) এর ঠিক দুই গুণ। বিভিন্ন হাদিস এই সম্পর্কে প্রমাণ বহন করে যে, আল্লাহ তাআলার দয়া তাঁর ক্রোধ ও রাগের ওপর প্রবল।

৯. আরবি শব্দ ‘জাযা’ অর্থ বিনিময় বা প্রতিদান এবং ‘মাগফিরাহ’ শব্দের অর্থ ক্ষমা। কুরআন মাজিদে ‘জাযা’ শব্দটি মোট ১১৭ বার দেখা যায়। ‘মাগফিরাত’ শব্দটি দেখা যায় ২৩৪ (দুইশত চৌত্রিশ) বার, যা ১১৭-এর ঠিক দুই গুণ। তা আবারও নির্দেশ করে, আল্লাহ তাআলার ক্ষমা তার ন্যায় বিচারের ওপর ছায়া বিস্তার করে।

অনেকেই কুরআন মাজিদের এমন অসংখ্য সংখ্যাতাত্ত্বিক সাদৃশ্য বের করেছেন। আলোচ্য বিষয়ের সঙ্গে প্রত্যেক সাদৃশ্যের একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। বলাবাহুল্য, কুরআন মাজিদের সকল শব্দ হিসাব করার জন্য মুহাম্মদ (সাঃ )এর এমন কোনো কম্পিউটার ছিল না, যা তাকে কুরআন মাজিদে একটি বিশেষ শব্দকে তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ শব্দের সঙ্গে একটি সংখ্যাতাত্ত্বিক সম্পর্কের মাধ্যমে ব্যবহার করতে সক্ষম করেছে।

Author: moq@2020@

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *