রাসুল (সাঃ ) এর সাহাবিদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও সহানুভূতি
وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا وَاذْكُرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنْتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنْتُمْ عَلَى شَفَا حُفْرَةٍ مِنَ النَّارِ فَأَنْقَذَكُمْ مِنْهَا كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آَيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ (103)
(আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না।) আর তোমরা তোমাদের ওপর আল্লাহর নিয়ামতকে (কৃতজ্ঞতার সঙ্গে) স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ভালবাসার সঞ্চার করলেন। অতঃপর তোমরা তাঁর অনুগ্রহে ভাই ভাই হয়ে গেলে। (আলে ইমরান, ০৩ : ১০৩)
وَإِنْ يُرِيدُوا أَنْ يَخْدَعُوكَ فَإِنَّ حَسْبَكَ اللَّهُ هُوَ الَّذِي أَيَّدَكَ بِنَصْرِهِ وَبِالْمُؤْمِنِينَ (62) وَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ لَوْ أَنْفَقْتَ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا مَا أَلَّفْتَ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ وَلَكِنَّ اللَّهَ أَلَّفَ بَيْنَهُمْ إِنَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ (63)
আর যদি তারা তোমাকে ধোঁকা দিতে চায়, তাহলে তোমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনিই তোমাকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর সাহায্য ও মুমিনদের দ্বারা। আর তিনি তাদের অন্তরসমূহে প্রীতি স্থাপন করেছেন। যদি তুমি জমিনে যা আছে তার সবকিছু ব্যয় করতে, তবওু তাদের অন্তরসমূহে প্রীতি স্থাপন করতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ তাদের মধ্যে প্রীতি স্থাপন করেছেন। নিশ্চয় তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান। (আনফাল, ০৮ : ৬২-৬৩)
এই আয়াতগুলি অনুধাবন ও উপলব্ধির জন্য ইসলাম গ্রহণের পূর্বে আরবদের অবস্থা সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন। ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে আরব উপদ্বীপে কোনো সুসংগঠিত রাষ্ট্রব্যবস্থা ছিল না। দেশটি বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত ছিল। গোত্র প্রতিহিংসা ও গোত্রযুদ্ধ ছিল সেই ভূখন্ডের আইন। প্রায়ই যুদ্ধ সংঘটিত হত কোনো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে। যেমন : কোনো কূপ থেকে পানি পান ইত্যাদি। আর এই সৃষ্ট যুদ্ধ যুগযুগ ধরে চলতে থাকত। গোত্র সংঘাত ও গোত্র শত্রুতা মদিনার মধ্যে ছিল অধিক বেশি প্রকট। তাতে ছিল দুটি সমান শক্তিধর গোত্র, একটির নাম আউস, অপরটি খাজরাজ। যেহেতু উভয় গোত্রই ছিল শক্তিধর, তাই তারা জীবনের সবক্ষেত্রেই ছিল একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। নিত্য যুদ্ধ, প্রতিহিংসা ও অবিশ্বাসের একটি দুর্গদ্ধময় পরিবেশে ছিল তাদের নিত্যদিনের বসবাস। আরও বিস্ময়ের ব্যাপার হল, তারা ইসলাম গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে এসব কিছু ভালবাসা ও সহানুভূতির পরিবেশে রূপান্তরিত হয়ে যায়। অধিকন্তু, পুরো আরব সমাজ পারস্পরিক এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ একটি অবিচ্ছিন্ন জাতিতে পরিণত হয় পুরো মানবজাতির ইতিহাসে যার কোনো তুলনা মিলে না। কুরআন মাজিদ এ কথাই বলছে, আল্লাহ তাআলাই মুমিনদের ওপর এই অনুগ্রহ করেছেন এবং তা কেউ কোনো জাগতিক উপায়ে অর্জন করতে পারে নি।