মহানবী (সাঃ) এর খ্যাতি ও মর্যাদা
بَرَاءَةٌ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ إِلَى الَّذِينَ عَاهَدْتُمْ مِنَ الْمُشْرِكِينَ (1) فَسِيحُوا فِي الْأَرْضِ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَاعْلَمُوا أَنَّكُمْ غَيْرُ مُعْجِزِي اللَّهِ وَأَنَّ اللَّهَ مُخْزِي الْكَافِرِينَ (2) وَأَذَانٌ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الْحَجِّ الْأَكْبَرِ أَنَّ اللَّهَ بَرِيءٌ مِنَ الْمُشْرِكِينَ وَرَسُولُهُ فَإِنْ تُبْتُمْ فَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَإِنْ تَوَلَّيْتُمْ فَاعْلَمُوا أَنَّكُمْ غَيْرُ مُعْجِزِي اللَّهِ وَبَشِّرِ الَّذِينَ كَفَرُوا بِعَذَابٍ أَلِيمٍ (3) إِلَّا الَّذِينَ عَاهَدْتُمْ مِنَ الْمُشْرِكِينَ ثُمَّ لَمْ يَنْقُصُوكُمْ شَيْئًا وَلَمْ يُظَاهِرُوا عَلَيْكُمْ أَحَدًا فَأَتِمُّوا إِلَيْهِمْ عَهْدَهُمْ إِلَى مُدَّتِهِمْ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِينَ (4)
আমি কি তোমার জন্য তোমার বক্ষ প্রশস্ত করি নি? আর আমি নামিয়ে দিয়েছি তোমার থেকে তোমার বোঝা, যা তোমার পিঠ ভেঙ্গে দিচ্ছিল। আর আমি তোমার (মর্যাদার) জন্য তোমার স্মরণকে সমুন্নত করেছি। (ইনশিরাহ ০৯ : ১-৪)
এই আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়েছিল মহানবী (সা: ) এর মাক্কি জীবনের প্রথম দিকে, যখন তিনি ছিলেন এমন দুর্বল ও কঠিন পরিস্থিতিতে যে, তিনি শহরের মধ্যে স্বাধীনভাবে চলাফেরা, ইসলাম প্রচার কিংবা নামাজ আদায় পর্যন্ত করতে পারতেন না। এমন প্রেক্ষাপটে কুরআন মাজিদ বলে, তার নাম সমুন্নত হয়েছে মহা সম্মানে। এই ভবিষ্যৎবাণী কিভাবে পূর্ণতা লাভ করেছিল তা দেখার জন্যে আবশ্যক হল, সেসব
উপায়-উপকরণের প্রতি লক্ষ করা, যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর যশ-খ্যাতি ও মর্যাদাকে সমুন্নত করেছেন।
প্রথমত. ‘মুহাম্মদ’ হল বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় নাম। মুসলমানদের নামের শুরুতে, মাঝখানে কিংবা শেষে মুহাম্মদ শব্দ থাকাটা তাদের একটি অতি সাধারণ রীতি। এটি একটি অনুপম মর্যাদা যা আল্লাহ তাআলা কেবল মুহাম্মদ (সাঃ ) প্রদান করেছেন। লক্ষ লক্ষ মুসলমান সর্বদা এই নামটি বহন করে চলে। যা সারা বিশ্বে এই নামটিকে সর্বাধিক পরিচিতি ও সর্বাপেক্ষা পুনরাবৃত নামের মর্যাদা দান করেছে। দ্বিতীয়ত, মুসলমানরা জ্ঞানের একটি নতুন শাখার সূচনা করেছে, যা ছিল মানুষের অজ্ঞাত। এ শাখাটি সিরাত নামে পরিচিত। মহানবী (সাঃ )এর জীবন বৃত্তান্ত রচনার সঙ্গে এটি সম্পর্কিত। মুসলমানদের প্রতিটি প্রজন্ম ‘সিরাত’ রচনার ক্ষেত্রে একেকটি নতুন নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং মহানবীর (সাঃ) জীবনী লেখার ধারা অব্যাহত রাখে। তৃতীয়ত, মুসলমানরা সাহিত্যের একটি নতুন ধারাও শুরু করেছে, যা অদ্যাবধি মানুষের অজানা, এটি না’ত নামে পরিচিত। এটি মহানবী (সা: ) সম্পর্কে কবিতা রচনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রতি বছরই পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে না’ত সম্পর্কিত অসংখ্য বই প্রকাশিত হয়।
চতুর্থত, আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ (সাঃ )এর নামকে ইসলামের মূল কালিমার একটি সম্পূর্ণ অংশ করেছেন। অর্থাৎ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ (আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, মুহাম্মাদ (সাঃ ) আল্লাহর রাসুল)। প্রত্যেক আমলদার মুসলমানই এই কালিমা তাদের জীবনের প্রাত্যহিক রুটিন হিসেবে বারবার উচ্চারণ করে। এভাবে অসংখ্য মানুষ তাদের জীবনের প্রতিটি দিন অসংখ্যবার মুহাম্মদ (সাঃ ) এর নাম
উচ্চারণ করে থাকে। পঞ্চমত, আল্লাহ তাআলা মুসলমানদেরকে তাঁর নবী (সাঃ ) ওপর দরুদ পাঠ করার আদেশ দিয়েছেন। অসংখ্য মানুষ তা সম্পাদন করে এবং এভাবে মুহাম্মদ (সাঃ ) এর নাম উচ্চারণ করে এবং তাদের প্রাত্যহিক জীবনে তাঁর গুণগান করে।
ষষ্ঠত, আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ (সাঃ) এর নামকে আযানের অবিচ্ছেদ্য অংশ করেছেন, যা প্রতিদিন পাঁচবার করে পৃথিবীর প্রতিটি মসজিদ থেকে ধ্বনিত হয়। সেহেতু মুহাম্মদ (সাঃ) এর নামও সারা বিশ্বে দৈনিক পাঁচবার উচ্চারিত হয়। অধিকন্তু যদি কেউ ভূগোলকের দিকে লক্ষ করে তবে দেখতে পাবে, পৃথিবীর
কোথাও না কোথাও সবসময় কোনো না কোনো নামাজের ও আযানের সময় বিরাজ করে। এভাবে দিন-রাতের চক্রাবর্তের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে
এমন কোনো ঘণ্টা অতিবাহিত হয় না, যখন পৃথিবীর কোথাও না কোথাও মুহাম্মদ (সাঃ ) এর নাম উচ্চারিত হয় না। একথাকেই কুরআন মাজিদে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে- ‘আর আমি তোমার
(মর্যাদার) জন্য তোমার স্মরণকে সমুন্নত করেছি।’
পূর্বোক্ত পৃষ্ঠাসমূহ কুরআন মাজিদের বহু ভবিষ্যৎবাণীর বর্ণনা দেয়। এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, কোনো মানুষই এমন জ্ঞানের অধিকারী হতে পারে না যা কুরআন মাজিদের এসব ভবিষ্যৎবাণী ধারণ করবে। একজন মানুষ কিছু সঠিক অনুমান তৈরি করতে পারে। কিন্তু কুরআন মাজিদের ভবিষ্যৎবাণীর বৈচিত্র্যময়তা ও গুণগত মান পরিষ্কার সাক্ষ্য বহন করে যে, একমাত্র আল্লাহ তাআলাই কুরআন মাজিদের জ্ঞানের উৎস।
‘নিশ্চয় এটি মহিমান্বিত কুরআন। যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে। কেউ তা স্পর্শ করবে না পবিত্রগণ ছাড়া। তা সৃষ্টিকুলের রবের কাছ থেকে নাজিলকৃত। তবে কি তোমরা এই বাণীকে তুচ্ছ জ্ঞান করছ? আর তোমরা তোমাদের রিজিক বানিয়ে নিয়েছ যে, তোমরা মিথ্যা আরোপ করবে? সুতরাং কেন নয়, যখন রুহ কণ্ঠদেশে
পৌঁছে যায়। আর তোমরা তখন কেবল চেয়ে থাক। আর তোমাদের চাইতে আমি তার খুব কাছে; কিন্তু‘ তোমরা দেখতে পাও না। তোমাদের যদি প্রতিফল দেয়া না হয়, তাহলে তোমরা কেন ফিরিয়ে আনছ না রুহকে, যদি তোমরা (তোমাদের স্বাধীনতা ও কুরআন অমান্য করার ক্ষেত্রে) সত্যবাদী হও? (ওয়াকিয়া, ৫৬ : ৭৭-৮৭)