কাবা শরিফে আল্লাহ তাআলার নিদর্শন
إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِلْعَالَمِينَ (96) فِيهِ آَيَاتٌ بَيِّنَاتٌ مَقَامُ إِبْرَاهِيمَ وَمَنْ دَخَلَهُ كَانَ آَمِنًا وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ (97)
নিশ্চয় প্রথম ঘর, যা মানুষের (ইবাদতের) জন্যে স্থাপিত হয়েছে তা বাক্কায় (মক্কায়), যা বরকতময় এবং বিশ্ববাসীর জন্য হিদায়াত (নির্দেশিকা)। তাতে রয়েছে স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ, (উদাহরণস্বরূপ) মাকামে ইবরাহিম। আর যে তাতে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ হয়ে যাবে। (আলে ইমরান, ০৩ : ৯৬-৯৭)
এই আয়াত অনুসারে কাবা শরিফ আল্লাহ তাআলার অনেক সমুজ্জ্বল নিদর্শনাবলি ধারণ করে আছে। একজন ঈমানদার পুরুষ কিংবা নারী যখন তাতে প্রবেশ করে তখন সে মুহূর্তেই সেসব আধ্যাত্মিক নিদর্শন অনুভব করতে পারে। অনুরূপভাবে কাবা শরিফের কিছু খুব সমুজ্জ্বল বাহ্যিক নিদর্শনও রয়েছে। এসব নিদর্শনের একটি হল জমজম কূপ, যা কাবা শরিফের অভ্যন্তরে অবস্থিত। হাদিসের ভাষ্য অনুসারে, জমজম কূপের পানি একজন মানুষের যে কোনো ইচ্ছা কিংবা প্রয়োজন পূরণে সাহায্য করে। এই হাদিসের ওপর ভিত্তি করে মুসলমানরা এই পানি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে।
উল্লেখ্য যে, কাবা শরিফ মক্কায় অবস্থিত, যা খুব শুষ্ক। এর চারপাশে রয়েছে তরু-লতাহীন পাথুরে পর্বতমালা। মক্কা মরুভূমি হওয়ার কারণে তাতে পুরো বছর উল্লেখ করার মত তেমন কোনো বৃষ্টিপাতও হয় না। অধিকন্তু মক্কার ভেতরে কিংবা বাইরে কোনো পুকুর কিংবা হ্রদও নেই। এ কারণে যে কেউ ধারণা করতে পারে, জমজম কূপ একটি সীমিত পরিমাণ পানি সরবরাহ করবে। কিন্তু বাস্তবতা হল, অসংখ্য মানুষ বিরতিহীনভাবে তার পানি ব্যবহার করছে। প্রথমত: মক্কার অধিকাংশ অধিবাসী, জেদ্দার পার্শ্ববর্তী
শহরসমূহ এবং তায়েফবাসীরা তাদের প্রাত্যহিক খাবার পানি ও রান্নার জন্য জমজমের পানির নিয়মিত সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে। দ্বিতীয়ত: সারা বছর অসংখ্য মানুষ কাবা শরিফ জিয়ারত করতে আসে। তারা খাবার, গোসল এমনকি ধোয়া-মোছার কাজেও ব্যাপকভাবে জমজমের পানি ব্যবহার করে। তৃতীয়ত: তারা যখন তাদের বাড়ি-ঘরে ফিরে যায় তখন প্রচুর পরিমাণে পানি তাদের বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের জন্য হাদিয়া স্বরূপ নিয়ে যায়। চতুর্থত: রোজার মাসে দৈনিক কমপক্ষে পাঁচলাখ মানুষ কাবা শরিফে সমবেত হয়। এ সকল জিয়ারতকারী ত্রিশদিন যাবৎ এই পানি প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করে। পঞ্চমত: হজ্বের মৌসুমে কাবা শরিফে বিশ লাখেরও অধিক লোকের আগমন ঘটে। এ সকল জিয়ারতকারী তাদের প্রাত্যহিক সকল প্রয়োজনে এই পানি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে এবং বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় প্রত্যেকে কমপক্ষে এক কনটেইনার করে পানি সঙ্গে নিয়ে যায়। বিস্ময়কর ব্যাপার হল, সারা বছর ধরে জমজম
কূপের পানির এত প্রচুর ব্যবহার সত্ত্বেও তাতে কখনো পানি সল্পতা দেখা দেয় নি। এখনো পর্যন্ত কেউ ধারণাও করতে পারে না যে, মক্কার মত এমন ঊষর ও পাথুরে ভূমিতে এই নিঃসীম পানির উৎস কোথায়। এটি উপরোক্ত আয়াতে বর্ণিত কাবা শরিফে আল্লাহ তাআলার একটি উজ্জ্বল নিদর্শন।