স্ত্রিংয়ের তত্ত্ব (String Theory)

string

স্ত্রিংয়ের তত্ত্ব (String Theory)

স্ত্রিংয়ের তত্ত্ব বুঝতে হলে আমাদের ছোট্ট সুতার কম্পন, ডার্ক মেটার, স্বাভাবিক চার মাত্রার বাইবের মাত্রা, গ্রাভিটেশনাল লেন্সিং, সমান্তরাল মহাবিশ্ব এবং মাল্টিভার্স সম্পর্কে ধারনা থাকতে হবে।

আপনারা অনেকেই স্টিফেন হকিংস এর নাম শুনেছেন। তিনি একজন মহাকাশ বিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি স্ট্রিংয়ের তত্ত্ব সমর্থন করেছিলেন। তার ধারনা মতে, এই মহাবিশ্ব অসীম নয় বরং সসীম। সে যাই হোক, স্ত্রিংয়ের তত্ত্ব থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে, সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম ভর হল এইটি খুবই ছোট্ট সূতা। আমরা যদি একটি বিন্দুভরকে একটি ছোট্ট একমাত্রিক সূতা দ্বারা পরিবর্তন করার কথা কল্পনা করতে পারি, তাহলে তাকেই স্ত্রিংয়ের তত্ত্ব অনুযায়ী বলা হবে বস্তুর ক্ষুদ্রতম এককের ভর। এবং ঐ সুতার কম্পনই নির্ধারন করবে ঐ ক্ষুদ্রতম এককের ভর, চার্জ এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট কেমন হবে। অল্প না বেশি। কোরআনেও (৪:৪৯) বস্তুর ক্ষুদ্রতম একককে পরোক্ষভাবে সূতা বলা হয়েছে।

٤٩  أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يُزَكُّونَ أَنْفُسَهُمْ ۚ بَلِ اللَّهُ يُزَكِّي مَنْ يَشَاءُ وَلَا يُظْلَمُونَ فَتِيلًا

অর্থঃ (হে নবী,) তুমি কি তাদের অবস্থা দেখোনি যারা নিজেদের খুব পবিত্র মনে করে, অথচ আল্লাহ তায়ালা যাকে ইচ্ছা তাকেই পবিত্র করেন এবং (সেদিন) তাদের উপর এক বিন্দু পরিমাণও যুমুল করা হবেনা।

Have you not considered those who claim purity for themselves? Rather, Allah purifies whom He wills, and they will not be wronged by a wick.

উপরের আয়াতে ‘ফাতিল’ শব্দের অর্থ হল এক বিন্দু পরিমাণ। এর অন্য একটি অর্থ হল এক চুল বা সুতা পরিমান। আবার স্ট্রিং তত্ত্ব অনুযায়ী বস্তুর ক্ষুদ্রতম একক হল অতি ক্ষুদ্র একটি সুতা। এবং ঐ সুতার কম্পন দ্বারাই নির্ধারিত হয় ঐ সুতার ভর কত হবে। রসায়ন অনুযায়ী যোগিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম একক হল অনু আর মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম একক হল পরমানু। কিন্তু স্ট্রিং তত্ত্ব অনুযায়ী বস্তুর ক্ষুদ্রতম একক হল অতি ক্ষুদ্র একটি কম্পমান সুতা।

কোরআনের অপর একটি আয়াতেও (০৪:১২৪) এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

١٢٤  وَمَنْ يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَٰئِكَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُونَ نَقِيرًا

অর্থ: (পক্ষান্তরে) যে ব্যক্তি কোন ভাল কাজ করবে- নর কিংবা নারী, সে যদি ঈমানদার অবস্থায়ই তা (সম্পাদন) করে, তাহলে (সে এবং তার মত) সব লোক অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে, পুরষ্কার দেয়ার সময় তাদের উপর বিন্দুমাত্রও অবিচার করা হবেনা।

But whoever works righteousness, whether male or female, and is a believer, those will enter Paradise, and will not be wronged by a pluck.

উপরের আয়াতে ‘নাকিরান’ শব্দের অর্থ হল অতি ছোট্ট সুতার একটি কম্পন। উপরের আগের আয়াতটিতে ‘ফাতিল’ শব্দের অর্থ হল এক চুল বা সুতা। আর এই আয়াতে ‘নাকিরান’ শব্দের অর্থ হল সেই সুতার একটি কম্পন। উভয় শব্দই পদার্থের ক্ষুদ্রতম এককের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর আধুনিক বিজ্ঞানের মাধ্যমে স্ট্রিং তত্ত্ব থেকে আমরা জানতে পারি, পদার্থের সেই ক্ষুদ্রতম এককই হল কম্পমান সুতা।

যারা বলে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কোরআন রচনা করেছেন তাদের কাছে প্রশ্ন তিনি কিভাবে ওই আমলে জানলেন যে, পদার্থের ক্ষুদ্রতম একক হল একটি ছোট্ট সুতার কম্পন? তিনি কি এ বিষয়ের উপর গবেষণা করে তারপর এই কোরআন রচনা করেছিলেন? নাউযুবিল্লাহ। কোরআন আল্লাহর বানী।

এবার আসুন, ডার্কমেটার বা মহাকাশের অদৃশ্য শক্তির উপস্থিতি সম্পর্কে জানি। সম্প্রতি, মহাকাশের বিজ্ঞানীরা ডার্কমেটার উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন। ডার্কমেটার দেখা যায়না। কিন্তু এটি এমন এক শক্তি, যা মহাবিশ্বের সকল ছায়াপথগুলোকে ধরে রেখেছে বা ঝুলিয়ে রেখেছে। ডার্কমেটার এক ধরনের অদ্ভুত শক্তি। সাধারনত, সকল বস্তুই সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। কিন্তু, ডার্কমেটার কখনও সংঘর্ষে লিপ্ত হয় না। ডার্কমেটার দেখাও যায়না, ডার্কমেটার দিয়ে কোন কিছুকে আঘাতও করা যায়না কিন্তু, ডার্কমেটারের আকর্ষন করার শক্তি আছে। নিন্মের চিত্রে দুইটি ডার্কমেটারের (দুটি নীল) মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে।

অনেকগুলো গ্রহ মিলে একটি সৌরজগত। অনেকগুলো সৌরজগত মিলে একটি ছায়াপথ। আবার অনেকগুলো ছায়াপথ মিলে একটি গ্যালাক্সি ফিলামেন্ট। আবার, অনেকগুলো গ্যালাক্সি ফিলামেন্ট মিলে একটি ক্লাস্টার।

চিত্রে দুইটি আলাদা ক্লাস্টার হাইড্রোজেন সহ সম্প্রসারিত হচ্ছে। এরা পরস্পর বিপরীত দিক থেকে আসছে বলে এদের মধ্যে সংঘর্ষ হবে। পর্যবেক্ষনে দেখা যায়, এই দুই ক্লাস্টারের মাধ্যমে বহন করা হাইড্রোজেনের মধ্যে সংঘর্ষ হয় ঠিকই, কিন্তু ব্ল্যাক মেটারের মধ্যে কোন সংঘর্ষ হয়না। এরা একটি অন্যটির ভিতর দিয়ে অনায়াসে চলে যায়। ব্ল্যাক মেটার দেখা যায়না, সংঘর্ষ করেনা কিন্তু এদের আকর্ষণ বলের মাধ্যমে মহাকাশে এদের চিহ্নিত করা যায়।

কোরআনেও (৮১:১৫-১৬) মহাকাশের অদৃশ্য বস্তু সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে।

١٦  الْجَوَارِ الْكُنَّسِ  ١٥  فَلَا أُقْسِمُ بِالْخُنَّسِ

অর্থঃ শপথ সেসব তারকা পুঞ্জের যা (চলতে চলতে) গা ঢাকা দেয়। (আবার) যা (মাঝে মাঝে) অদৃশ্য হয়ে যায়।

I swear by those that are invisible (Khunnas خنس), that move, that sweep.

ডার্কমেটার দেখা যায়না, নড়াচড়া করে এবং হাইড্রোজেন বহন করে চলে। পদার্থবিদ ও মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মতে, ডার্কমেটার দেখা না যাওয়ার প্রধান কারন হল তাদের মাত্রা ভিন্ন। আমরা চার মাত্রার জগতের বস্তু দেখতে পাই। এই চারটি মাত্রা হল, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা এবং সময়। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান আরও ছয়টি মাত্রার প্রমান পেয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, আমরা ডার্কমেটারকে দেখতে পারিনা বা এদের সংঘর্ষ ঘটাতে পারিনা কারন, ডার্কমেটারের ভরগুলি অন্য মাত্রায় বা ডাইমেনশনে আছে।

যারা বলে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কোরআন রচনা করেছেন তাদের কাছে প্রশ্ন তিনি কিভাবে ওই আমলে জানলেন যে, অদৃশ্য বস্তু বা ডার্ক মেটার থাতে পারে? তিনি কি এ বিষয়ের উপর গবেষণা করে তারপর এই কোরআন রচনা করেছিলেন? নাউযুবিল্লাহ। কোরআন আল্লাহর বানী।

 

কোরআন অনুযায়ী, আমরা ফেরেশতা ও জীনদের দেখতে পারিনা, তাদেরকে ধরতে পারিনা কিন্তু তাদের ওজন আছে। আর ওজন আছে মানে ভর আছে (F = mg)। তবে এই ভর অন্য মাত্রায় আছে। আর এজন্যই আমরা তাদের দেখতে পারিনা এবং তাদের সাথে সংঘর্ষও করতে পারিনা। কোরআনে (৫৫:৩১) এ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

٣١  سَنَفْرُغُ لَكُمْ أَيُّهَ الثَّقَلَانِ

অর্থঃ দায়িত্বের ভারে ভারাক্রান্ত (ওহে মানুষ ও জীন), (এর মাঝেও কিন্তু) আমি তোমাদের (হিসাব নেয়ার) জন্যে অচিরেই সময় বের করে নেব।

We (Allah is one and only) will settle your affair, both you of weight (man and jinn)

উপরের আয়াতে ‘ছাকালাইন’ অর্থ ভার (দ্বিবচন অর্থ্যাৎ মানুষ ও জীন উভয়ের জন্য)। অর্থ্যাৎ জীনদের ওজন আছে সামান্য হলেও কিন্তু তা আছে অন্য মাত্রায় আর এজন্য আমরা তাদের দেখতে পাইনা, সংঘর্ষও করতে পারিনা। কিন্তু আমরা তাদের মাত্রার মধ্যাকর্ষন অনুভব করতে পারি এবং তারাও আমাদের মাত্রার মধ্যাকর্ষন অনুভব করতে পারে।

আমাদের দৃশ্যমান কাছের আকাশের উপর আরও ছয়টি আকাশ আছে। জীনরা যেমন অদৃশ্য ঠিক তেমনি ঐ ছয়টি আকাশের বস্তুগুলোও অদৃশ্য। আমরা তাদের দেখতে পারিনা, সংঘর্ষও করতে পারিনা কিন্তু তাদের মধ্যাকর্ষন বল অনুভব করতে পারি। কোরআনে (৪১:১২) এ সংক্রান্ত একটি আয়াতে আছে।

١٢  فَقَضَاهُنَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ فِي يَوْمَيْنِ وَأَوْحَىٰ فِي كُلِّ سَمَاءٍ أَمْرَهَا ۚ وَزَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَحِفْظًا ۚ ذَٰلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ

অর্থঃ (এই) একই সময়ে তিনি দুদিনের ভিতর (ধুম্রকুঞ্জকে) সাত আসমানে পরিনত করলেন, এবং প্রতিটি আকাশে তার (উপযোগী) আদেশনামা পাঠালেন; পরিশেষে আমি নিকটবর্তী আসমানকে তারকারাজি দ্বারা সাজিয়ে দিলাম এবং (তাকে শয়তান থেকে) সংরক্ষিত করে দিলাম, এসব (পরিকল্পনা) অবশ্যই পরাক্রমশালী ও সর্বজ্ঞ আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক (আগে থেকেই) সুবিন্যস্ত করে রাখা হয়েছিল।

Allah is the one who created seven Heavens and from Earth like them (of corresponding type); [Allah’s] command descends among them so that you may know that Allah is capable of anything and that Allah knows everything.

আমাদের সবচেয়ে নিকটবর্তী আকাশের বাইরে যে সাত আকাশ আছে, সেখানেও পৃথবীর মত গ্রহ আছে। জীনদের মাত্রা ভিন্ন তাই আমরা তাদের দেখতে পারিনা। ঠিক তেমনি বাকী ছয় আকাশের এবং সেই ছয় আকাশের বস্তুগুলোর মাত্রাও ভিন্ন আর এজন্যই স্বাভাবিক দৃষ্টি দিয়ে আমরা সেগুলো দেখতে পাইনা।

যারা বলে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কোরআন রচনা করেছেন তাদের কাছে প্রশ্ন তিনি কিভাবে ওই আমলে ধারনা করেছিলেন ভিন্ন মাত্রা বা ভিন্ন ডাইমেনশনের, যার কারনে আমরা জীন এবং বাকী ছয় আকাশের বস্তুগুলো দেখতে পাইনা? তিনি কি এ বিষয়ের উপর গবেষণা করে তারপর এই কোরআন রচনা করেছিলেন? নাউযুবিল্লাহ। কোরআন আল্লাহর বানী।

আপেক্ষিকতার সুত্র অনুযায়ী, গ্যালাস্কি বা ছায়াপথের আকর্ষনে আলোর চলার দিক বেকে যায়। ফলে আমরা মহাকাশের দুরের তারাগুলোকে যেখানে দেখি, ঐ অবস্থানটি উক্ত তারার আসল অবস্থান নাও হতে পারে। মধ্যাকর্ষন-জনিত-লেন্সিং এর কারনে এমনটি হয়, অর্থ্যাৎ, গ্যালাস্কি বা ছায়াপথের আকর্ষনে আলোর চলার দিক বেকে যায়।

আমরা মহাকাশের অদৃশ্য বস্তু বা ডার্ক মেটার দেখতে পাইনা কিন্তু তাদের আকর্ষন করার ক্ষমতা অনুভব করতে পারি। এবং মধ্যাকর্ষন-জনিত-লেন্সিং পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের অবস্থান নির্নয় করতে পারি। অর্থ্যাৎ, মহাকাশের দূর থেকে আসা কোন তারার আলোকরশ্মি কোন জায়গায় কত কোণে বেঁকেছে তা নির্নয় করতে পারলেই আমরা ডার্ক মেটারের ভর নির্নয় করতে পারব যে, ঐ তারার প্রকৃত অবস্থানটি কোথায়। আমরা মুসলমানরা বিশ্বাস করি, কোরআনে আল্লাহ (৪১:১২) নং আয়াতে অবিশ্বাসীদের চ্যলেঞ্জ করেছেন যে তারা কখনই বাকী ছয় আকাশে যেতে পারবেনা। আল্লাহ তায়ালা সাত আসমানকে একটির উপর আরেকটি স্থাপন করেছেন বা লেপ্টে দিয়েছেন।

মধ্যাকর্ষন-জনিত-লেন্সিং বা গ্রভিটেশনাল লেন্সিং এর কারনে যে আলো বেকে যায় এবং সে জন্যে আমরা যে দূর থেকে আসা কোন তারার আসল অবস্থান না দেখে বরং তার নকল অবস্থান দেখি, তা পরোক্ষভাবে কোরআনে (৬৭:৩-৪) উল্লেখ করা হয়েছে।

٣  الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقًا ۖ مَا تَرَىٰ فِي خَلْقِ الرَّحْمَٰنِ مِنْ تَفَاوُتٍ ۖ فَارْجِعِ الْبَصَرَ هَلْ تَرَىٰ مِنْ فُطُورٍ

অর্থঃ তিনিই সাত (মজবুত) আসমান বানিয়েছেন, পর্যায়ক্রমে একটার উপর আরেকটা (স্থাপন করেছেন); অসীম দয়ালু আল্লাহ তায়ালার এই (নিপুন) সৃষ্টির কোথাও কোন খুত তুমি দেখতে পাবেনা; আবার তাকিয়ে দেখতো, কোথাও কি তুমি কোন রকম ফাটল দেখতে পাও? অতপর (তোমার) দৃষ্টি ফেরাও (নভোমণ্ডলের প্রতি,) দেখো আরেকবার তোমার দৃষ্টি ফেরাও, (দেখবে তোমার) দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকেই ফীড়ে আসবে।

[Allah] is the one who created seven superimposed Heavens. You do not see variations in the formations of the Compassionate, so redirect your sight, do you see any creation?  Then redirect your sight again, your vision returns to you in defeat and regret.

উপরের আয়াতে ‘ফুতুর’ শব্দের অর্থ হল শুন্য থেকে কিছু সৃষ্টি হওয়া। সুতরাং, কোরআন আমাদের প্রশ্ন করছে, আমরা কি কেউ শুন্য থেকে কিছু সৃষ্টি হতে দেখেছি? প্রথমবার দেখতে ভুল হলেও দ্বিতীয়বার দেখতে আর ভুল হবেনা। কিন্তু দ্বিতীয়বার দেখার আরও ব্যখ্যা আছে।

আবার কেন অন্যদিকে তাকিয়ে দেখতে বলা হল? নিশ্চয়ই তার কারন আছে। আজকে আমরা আধুনিক বিজ্ঞানের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, বড় বড় গ্যালাস্কি বা নক্ষত্রের আকর্ষনে আলোর চলার দিক বেকে যায়। একেই গ্রাভিটেশনাল লেন্সিং বলে। ফলে আমরা মহাকাশের দুরের তারাগুলোকে যেখানে দেখি, ঐ অবস্থানটি উক্ত তারার আসল অবস্থান নাও হতে পারে। যেসকল নক্ষত্রের ভর বেশী (যেমন কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাক হোল) তারা দূর থেকে আসা আলোকরশ্মির পথ বাকিয়ে দেয়। ফলে দর্শক যেখানে তারা দেখতে পায় সেটি তার আসল আবস্থান নয়। আলোক রশ্মি কোন স্থানে কত কোণে বেঁকেছে, তা নির্নয় করতে পারলেই আমরা ডার্ক মেটারের দুরত্ব নির্নয় করতে পারি। তবে ডার্ক মেটার থেকে কোন আলো বের হতে পারেনা। সেজন্য, ডার্ক মেটারের পিছনে থাকা কোন গ্যালাক্সি থেকে আসা আলোক রশ্মি কত কোণে বেকেছে তা নির্নয় করতে হবে। এবং তাদের দুরত্ব জানতে হবে। পিছনের গ্যালাক্সি থেকে আসা আলোকরশ্মি ডার্ক মেটারের উভয়পাশ (চিত্রে ডার্কমেটারের উপর দিয়েও আসে আবার নিচ দিয়েও আসে) দিয়েই আসে। তখনই আমরা ডার্ক মেটারটির আনুমানিক ভর নির্নয় করতে পারি। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এ পদ্ধতি ব্যবহার করেই ডার্কমেটারের ভর নির্ণয় করে। সুতরাং, ডার্কমেটারের কারনে আলোরশ্মি কত কোণে বেঁকেছে তা নির্নয় করতে মহাকাশের দিকে বারবার (ডার্ক মেটারের উভয়দিকের আলোকরশ্মি) তাকাতে হয়, একবার তাকালে হয়না।  কত কোণে বেঁকেছে তা নির্নয় করতে না পারলে ডার্কমেটার সম্পর্কে জানার আর কোন পথ নেই। কোরআনেও আকাশের দিকে আবার দৃষ্টি দিতে বলা হয়েছে। শুধু একবার বললে ভুল হত।

যারা বলে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কোরআন রচনা করেছেন তাদের কাছে প্রশ্ন তিনি কিভাবে ওই আমলে কোন আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়াই জানলেন যে, ডার্কমেটারের ভর নির্নয়ে, আলোরশ্মি কত কোণে বাকে- তা নির্নয়ে মহাকাশের দিকে একবার তাকালে হয়না বরং নুন্যতম দুবার বা তার থেকে বেশিবার তাকাতে হয়? তিনি কি এ বিষয়ের উপর গবেষণা করে তারপর এই কোরআন রচনা করেছিলেন? নাউযুবিল্লাহ। কোরআন আল্লাহর বানী।

স্বাভাবিকভাবে, পদার্থ বিজ্ঞানে বস্তুর ক্ষুদ্রতম একক হল অনু যাকে বিন্দুর সাথে তুলনা করা যায়। কিন্তু স্ট্রিং তত্ত্ব অনুযায়ী বস্তুর ক্ষুদ্রতম একক হল একটি ক্ষুদ্র কম্পমান সুতা। এবং ঐ সুতার কম্পনই বস্তুর ভর নির্ধারন করে। আমরা সাধারণত তিনটি মাত্রার কল্পনা করতে পারি। আর তা হল দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা। তবে এই তিনটি মাত্রা ছাড়াও আরও একটি মাত্রা আবশ্যক। আর তা হল সময়। সুতরাং, আমরা আমাদের চারপাশে যা কিছু দেখতে ও ধরতে পারি  তাদের সকলের চারটি মাত্রা (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা এবং সময়)। কিন্তু পদার্থ বিজ্ঞানীদের মতে স্ট্রিং তত্ত্ব অনুযায়ী, ঐ কম্পমান-সুতার কম্পনের জন্য উপরের চারটি মাত্রা ছাড়াও আরও অতিরিক্ত মাত্রার প্রয়োজন। ঐ কম্পমান-সুতার কম্পনের জন্য আরও অতিরিক্ত ছয়টি মাত্রার প্রয়োজন হয়। স্ট্রিং তত্ত্বের যতগুলো ব্যাখ্যা আছে, সবগুলতেই দশটি মাত্রার (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা এবং সময় + আরও ছয়টি = দশটি মাত্রা) কথা বলা হয়েছে, যা স্বাভাবিকভাবে কল্পনা করা কঠিন।

পদার্থ বিজ্ঞানের মতে আমরা একটি মহাবিশ্বে বা ইউনিভার্সে বসবাস করছিনা বরং একইসাথে অনেকগুলো মহাবিশ্বে বা মাল্টিভার্সে বসবাস করছি। এরা একটি আর একটির সাথে জড়িয়ে আছে। তবে এই আলাদা আলাদা মহাবিশ্বগুলোর মধ্যে একটি বিষয় কমন অর্থ্যাত সব মহাবিশ্বেই আছে। আর তা হল মধ্যাকর্ষন শক্তি বা গ্রাভিটি। আর এ থেকেই মাল্টিভার্সের মত আমরা সমান্তরাল মহাবিশ্ব বা প্যারালাল ইউনিভার্সের কথা কল্পনা করতে পারি। ডার্কমেটারকে দেখতে বা ধরতে হলে কেবল অন্য মাত্রায় গেলেই হবেনা বরং অন্য সমান্তরাল বিশ্বেও যেতে হবে। একটি কাপড়ে যেমন অনেকগুলো সুতা পাশাপাশি সমান্তরালে নির্দিষ্ট দুরত্ব পরপর থাকে, সমান্তরাল মহাবিশ্বগুলোও তেমন পাশাপাশি নির্দিষ্ট দুরত্ব পরপর সমান্তরালে অবস্থান করছে। তবে সমান্তরাল মহাবিশ্বগুলোর একটির সাথে অন্যটির পদার্থ বিজ্ঞানের সুত্রগুলো একরকম নাও হতে পারে। কিন্তু তাদের মধ্যে মধ্যাকর্ষন বল বা গ্রাভিটি সব মহাবিশ্বে কমন। আমরা যদি আমাদের মহাবিশ্বকে নিন্মের চিত্রের সমান্তরাল মহাবিশ্বের সাথে যুক্ত করতে পারি, তাহলেই আমরা মাল্টিভার্স কল্পনা করতে পারব।

কোরআনে (৫১:৭) একটি আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে,

٧  وَالسَّمَاءِ ذَاتِ الْحُبُكِ

অর্থঃ বহু কক্ষ বিশিষ্ট আকাশের শপথ।

And the heaven that has weaves.

উপরের আয়াতে ‘হুবুক’ শব্দের অর্থ হল সুতায় থাকা গিট্টুগুলি বা সুতাগুলি। এটি বহুবচন শব্দ। সুতরাং, কোরআনে যে সাত আসমানের কথা (মাল্টিভার্স) উল্লেখ করা হয়েছে তারা আসলে একই কাপড়ের পাশাপাশি থাকা সুতাগুলোর মত সমান্তরাল বিশ্বের সমাহার, যার একটি অন্যটির সাথে জড়িয়ে আছে।

কোরআনে উল্লিখিত সাত আসমানের বাকী ছয় আসমানের বস্তুগুলোর সবই আলাদা মাত্রার (আমাদের স্বাভাবিক চার মাত্রার বাইরে) আর এজন্যই ওগুলোকে স্বাভাবিকভাবে আমরা দেখতে বা ধরতে পারিনা।

যারা বলে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কোরআন রচনা করেছেন তাদের কাছে প্রশ্ন তিনি কিভাবে ওই আমলে কোন আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়াই ধারনা করলেন যে, আমরা একটি মহাবিশ্বে নয় বরং মাল্টিভার্সে বসবাস করছি? তিনি কি এ বিষয়ের উপর গবেষণা করে তারপর এই কোরআন রচনা করেছিলেন? নাউযুবিল্লাহ। কোরআন আল্লাহর বানী।

Author: moq@2020@

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *