মহাবিশ্বের আকৃতি (Shape of Universe)

Shape

মহাবিশ্বের আকৃতি (Shape of Universe)

আমরা জানি পৃথিবীর আকার গোলাকার, চাদ ও সূর্যের আকারও গোলাকার। তাহলে এই মহাবিশ্বের আকার কেমন? সমতল, গোলাকার না আয়তাকার? প্রতিটি দর্শক তার চারপাশের দৃশ্যমান আকাশকে দেখে একটি সম্প্রসারিত গোলকের ন্যায়, যার ব্যস প্রায় ৯৩ আলোকবর্ষ। কোন দর্শক যদি দৃশ্যমান মহাবিশ্বের গোলকটির বাইরে গিয়েও এই মহাবিশ্বের দিকে তাকায়, তবুও সে এই মহাবিশ্বকে একটি সম্প্রসারিত গোলকের মতই দেখবে, যার ব্যস হবে প্রায় ৯৩ আলোকবর্ষ।

পৃথিবীতে আমরা চারটি দিক ব্যবহার করি। কিন্তু মহাবিশ্বের নির্দিষ্ট কোন দিক বা সীমা নেই। আর এজন্যই, মহাবিশ্বের সীমা আমরা ততটুকুই মাপতে পারি যতটুকু আমরা দেখতে পারি। আর এজন্য যে দিকেই তাকাই না কেন আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্বের সীমানা বা দুরত্ব সবদিকেই সমান। আর এই সবদিকের সীমানা মিলেই তা একটি বৃত্তাকার গোলকের মত দেখায়। সুতরাং, বলা যায়, আমাদের পৃথিবীকে কেন্দ্রে রেখে ৯৩ আলোকবর্ষের ব্যাস বিশিষ্ট যে মহাবিশ্ব-গোলক বা গোলকার বল, সেটাই আমাদের দৃশ্যমান মহাজগত। এই মহাবিশ্বের প্রতিটি আলাদা আলাদা স্থান থেকে মহাকাশের দিকে তাকালে আলাদা আলাদা চিত্র পাওয়া যাবে।

আমাদের দৃশ্যমান মহাকাশ যে গোলাকার তা আগের দিনের মানুষ জানত না। কিন্তু কোরআনে (৫৫:৩৩) এ বিষয়ে পরোক্ষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

٣٣  يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ إِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ تَنْفُذُوا مِنْ أَقْطَارِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ فَانْفُذُوا ۚ لَا تَنْفُذُونَ إِلَّا بِسُلْطَانٍ

অর্থঃ হে জীন ও মনুষ্য সম্প্রদায়, যদি আকাশমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের এ সীমারেখা অতিক্রম করার তোমাদের সাধ্য থাকে (যাও! অতপর) তা অতিক্রম করেই দেখো; (কিন্তু আমার দেয়া বিশেষ) ক্ষমতা ছাড়া তোমরা কিছুতেই (এ সীমা সরহদ) অতিক্রম করতে পারবেনা।

O society of jinn and humans! If you can escape the diameters of the heavens and the earth, go ahead and escape. But you will not escape except with authorization.

উপরের আয়াতে ‘আকতার’ শব্দের অর্থ হল ব্যাস। ব্যাস কিসের বৈশিষ্ট্য বা ব্যাস আমরা কোথায় থেকে নির্নয় করি? আমরা জানি, ব্যাস হল বৃত্ত বা গোলকের উপাদান। উপরের আয়াত অনুযায়ী আকাশমণ্ডল (মহাবিশ্ব) ও ভূমণ্ডলের (পৃথিবী) ব্যস আছে। অর্থ্যাৎ, আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্ব হল গোলকের বা গোলাকার বলের মত। পৃথিবীতে থাকা মানুষ এবং আকাশে থাকা জীনেরা তাদের চারপাশের দৃশ্যমান মহাবিশ্বকে গোলাকার বলের মত দেখতে পায়।

যারা বলে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কোরআন রচনা করেছেন তাদের কাছে প্রশ্ন তিনি কিভাবে ওই আমলে কোন আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়াই ধারনা করলেন যে, আমাদের চারপাশের দৃশ্যমান মহাবিশ্ব হল গোলাকার বলের মত? তিনি কি এ বিষয়ের উপর গবেষণা করে তারপর এই কোরআন রচনা করেছিলেন? নাউযুবিল্লাহকোরআন আল্লাহর বানী।

পায়। মহাকাশ বিজ্ঞানের একটি সুত্র হল, যখন আমরা মহাকাশে বড় বড় দুরত্বের বস্তুগুলো দেখি, তখন মহাবিশ্বের বৈশিষ্ট্যগুলো (ঘনত্ব, ব্যাস ইত্যাদি) সকল দর্শকের জন্যই একই রকম হয়। আধুনিক বিজ্ঞান তাই বলে। এ সংক্রান্ত কোরআনের একটি আয়াত (৭৯:২৭) ।

٢٨  رَفَعَ سَمْكَهَا فَسَوَّاهَا ٢٧  أَأَنْتُمْ أَشَدُّ خَلْقًا أَمِ السَّمَاءُ ۚ بَنَاهَا  

অর্থঃ তোমরা বল, তোমাদের দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা কি বেশি কঠিন, না আকাশ সৃষ্টি করা বেশি কঠিন? আল্লাহ তায়ালা তা বানিয়েছেন। তার ছাদ অনেক উচ্চে তুলেছেন, অতঃপর তাকে ভারসাম্যপূর্ণ করেছেন

Are you more difficult to create, or the heaven? He constructed it. He raised its thickness, and equalized it.

উপরের আয়াতে ‘He raised its thicknessএর অর্থ হল মহাবিশ্ব সম্প্রসারণশীল, কারন, এর ব্যস ধীরে ধীরে বাড়ছে। এবং উপরের আয়াতে ‘সাওয়া’ অর্থ সমান করে দেওয়া।  equalized it’ এর অর্থ হল মহাবিশ্বের ঘনত্ব সকল দর্শকের জন্য সমান। আধুনিক কালে বিজ্ঞান থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে, সকল দর্শকের কাছে সমান ব্যাসের দৃশ্যমান মহাবিশ্ব দেখা যায়। মহাবিশ্ব গোলাকার ব্যতীত অন্য কোন আকৃতির (সমতল বা আয়তাকার) হলে এমনটা সম্ভব হতনা।

অর্থ্যাত এই মহাবিশ্ব গোলাকার ও সসীম (উপরের প্রথমটি)। দ্বিতীয়টির মত খোলা বা তৃতীয়টির মত সমতল নয়। খোলা বা সমতল হলে একজন দর্শকের পক্ষে সমান সমান ব্যাস পাওয়া সম্ভব হতনা।

যারা বলে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কোরআন রচনা করেছেন তাদের কাছে প্রশ্ন তিনি কিভাবে ওই আমলে কোন আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়াই ধারনা করলেন যে, মহাবিশ্বের যে কোন জায়গা থেকে একজন দর্শক সমান ব্যাস বিশিষ্ট গোলাকার মহাবিশ্ব দেখতে পায়? তিনি কি এ বিষয়ের উপর গবেষণা করে তারপর এই কোরআন রচনা করেছিলেন? নাউযুবিল্লাহকোরআন আল্লাহর বানী।

একটি গোলাকার বলের যে কোন একটি নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে কোন ব্যক্তি যে কোন দিকে একদম সোজা বরাবর যেতে থাকলে, ঐ ব্যক্তি ঘুরে ফিরে আবার শুরুর বিন্দুতেই ফিরে আসবে। মহাবিশ্বটাও এমন গোলাকার তবে বিশাল। যে কোন একটি নির্দিষ্ট দিকে যদি কোন ব্যক্তি ভ্রমন করতে থাকে, তাহলে সে ঘুরে ফিরে আবার আগের জায়গাতেই ফিরে আসবে। যেমনটি গোলাকার বস্তুর ক্ষেত্রে হয়। আর থেকেই প্রমানিত হয়, সত্যিকার মহাবিশ্ব আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্ব থেকে অনেক বড় (নুন্যতম ২৫০ গুন)। কোরআনে (৮৬:১১) এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

١١  وَالسَّمَاءِ ذَاتِ الرَّجْعِ

অর্থঃ ঘুরে ঘুরে আসা বৃষ্টি বর্ষনকারী আকাশের শপথ।

And the sky that returns.

উপরের আকাশে রাজঊন শব্দের অর্থ হল ঘুরে ফিরে প্রথম জায়গায় ফিরে আসা। আমরা জানি, সৌরজগতের প্রতিটি গ্রহ এবং নক্ষত্র নিজেদের কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে আবার আগের জায়গায় ফিরে আসে। বিশাল মহাবিশ্বের ক্ষেত্রেও যদি এমনটি ঘটে তাহলে তার অর্থ দাড়ায়, আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্ব হল সসীম ও গোলাকার। এটা আমারা সম্প্রতি জানতে পারলেও কোরআনে অনেক আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। মানুষ এবং জীন উভয়েই চেষ্টা  করলেও মহাবিশ্ব ও পৃথিবীর ব্যসের যে সীমানা তা অতিক্রম করতে পারবেনা। সুতরাং, কোরআন অনুযায়ী এই দৃশ্যমান মহাবিশ্ব সসীম, বদ্ধ এবং গোলাকার।

যারা বলে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কোরআন রচনা করেছেন তাদের কাছে প্রশ্ন তিনি কিভাবে ওই আমলে কোন আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়াই ধারনা করলেন যে, দৃশ্যমান মহাবিশ্ব গোলাকার যার এক জায়গা থেকে সোজা ভ্রমন শুরু করলে ঘুরে ফিরে আবার আগের জায়গাতেই ফিরে আসতে হয়? তিনি কি এ বিষয়ের উপর গবেষণা করে তারপর এই কোরআন রচনা করেছিলেন? নাউযুবিল্লাহকোরআন আল্লাহর বানী।

Author: moq@2020@

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *