সূরা আলাক এর অলৌকিকত্বঃ
সুরা আলাক কোরআনের ৯৬ তম সুরা এবং এতে ১৯ টি আয়াত আছে। কোরআন নাযিলের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম এই সুরার প্রথম ৫ টি আয়াত নাযিল হয়।
- আমরা জানি, মানুষের ২৩ জোড়া ক্রোমজোম আছে। অর্থ্যাৎ, মোট ক্রোমজোম সংখ্যা ২৩X২ = ৪৬ টি। অবাক হবার বিষয় হল, এই আলাক সুরার প্রথম আয়াতের ৯ তম শব্দটিই হল ‘আলাক’। আপনারা হয়ত জেনে থাকবেন, মৌলিক সংখ্যার সিরিজ (২, ৩, ৫, ৭, ১১, ১৩, ১৭, ১৯, ২৩…) কোরআনে অনেক কিছুর নির্দেশক। আর এই সিরিজের ৯ তম সংখ্যাটিই হল ২৩।
- আমাদের আদি পিতা বা পৃথিবীর প্রথম মানুষ হল হযরত আদম (আঃ)। আদমের সাথে আমাদের জন্মের সম্পর্ক যেমন আছে তেমনি সম্পর্ক আছে মানুষের ক্রমোজোম সংখ্যার। মানুষের মোট ক্রোমজোম সংখ্যা ২৩X২ = ৪৬ টি। আবার, ‘আদম’ শব্দটির গাণিতিক মানও হল ৪৬। ‘আদম’ শব্দটি তৈরী হতে চারটি অক্ষর দরকার হয়। ‘হামজা’ =১, ‘আলিফ’ = ১, ‘দাল’ = ৪, ‘মিম’= ৪০। এদের যোগফল, ১+১+৪+৪০ = ৪৬।
- ‘আলাক’ শব্দের অর্থ হল মাতৃগর্ভে জোকের মত ঝুলে থাকা রক্তপিণ্ড। আলাক শব্দের সাথে যেমন মানুষের জন্মের সম্পর্ক আছে, তেমনি সম্পর্ক আছে সুরা ইখলাসের। চলুন, সুরা ইখলাসের দিকে লক্ষ্য করি।
- بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (1) اللَّهُ الصَّمَدُ (2) لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ (3) وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ (4)
এই সুরার প্রতিটি আয়াতই ‘দাল’ অক্ষর দ্বারা শেষ হয়েছে। আবার, এই সুরার মাঝখানের শব্দটি হল ‘ইয়ালিদ’ যার অর্থ জন্ম দেয়া। এই সুরায় শুধুমাত্র এই শব্দেই একটি মাত্র ‘যের’ আছে। আর এই শব্দের আগেও সাতটি শব্দ এবং পরেও সাতটি শব্দ। উপরন্তু, এই সুরায় শুধুমাত্র ‘ইয়ালিদ’ শব্দেই যে একটিমাত্র ‘যের’ আছে, তার আগেও ২৩ টি অক্ষর এবং পরেও ২৩ অক্ষর। যেন সুরা ইখলাসের এই মাঝখানের শব্দে লুকিয়ে আছে সমগ্র মানব জাতির ক্রোমোজোমের ইতিহাস।
- কোরআনের শেষের দিক থেকে গণনা করতে থাকলে আপনারা দেখবেন, সুরা আলাক হল ১৯ তম সুরা। অর্থ্যাৎ, সুরা আলাক এর পর আরও ১৮ টি সুরা আছে। আর এই ১৮ সংখ্যার সাথেও অলৌকিকত্ব আছে। এই সুরার প্রথম আয়াতেও ১৮ টি অক্ষর আছে। আবার, এই সুরা শুরু হয়েছে ‘আলিফ’ অক্ষর দিয়ে। আবার, এই সুরায় মোট আলিফ আছে ৬১ টি আর অবাক হবার বিষয় হল, এই ৬১ হল ১৮ তম মোলিক সংখ্যা।
- ১৮ এর অলৌকিকত্ব এখনও শেষ হয়নি। আগেই উল্লেখ করেছি, সুরা আলাকের প্রথম আয়াতে ১৮ টি অক্ষর আছে। এই আয়াতের সাথে সুরা ফাতিহারও সম্পর্ক আছে। সুরা ফাতিহার ১৮ তম শব্দ হল, اهْدِنَا আর এই শব্দে আছে, আলিফ (১), হা (২৬), দাল (৮), নুন (২৫), আলিফ(১)। এদের যোগফল, ১+২৬+৮+২৫+১ = ৬১ আর আমরা জানি, ৬১ হল ১৮ তম মৌলিক সংখ্যা। আরও গভীরে গণনা করলে আমরা দেখব, اهْدِنَا শব্দে ৪ টি অক্ষর (যেহেতু আলিফ দুবার এসেছে) আছে আর ১৮ এর অলৌকিকত্ব আছে। এদের গুণ করে পাই, ৪X১৮ = ৭২, এখন নিশ্চয়ই ভাবছেন ৭২ এর বিশেষত্ব কি? ৭২ হল সুরা আলাকের মোট শব্দ সংখ্যা। এখানেই শেষ নয়। এবার যদি এই ৭২ কে আবার ৪ দিয়ে গুন করি তাহলে কি হবে? ৭২X৪ = ২৮৮ আবার নিশ্চয়ই ভাবছেন ২৮৮ আবার কি? ২৮৮ হল সুরা আলাকের মোট অক্ষর সংখ্যা। গানিতিক হিসাবগুলো দেখে মনে হয় যেন, সুরা ফাতিহার ১৮ তম শব্দ اهْدِنَا এর ভিতর গাণিতিক ভাবে সুরা আলাকের শব্দ সংখ্যা এবং অক্ষর সংখ্যা সহ সব তথ্য লুকানো আছে। DNA তথ্যের মত যেন সুরা ফাতিহা এবং সুরা আলাকের তথ্যগুলো একটি অন্যটির সাথে জড়ানো।
- এবার আমরা اهْدِنَا শব্দটির দিকে গুরুত্ব দিব। সম্পুর্ন কোরআনে এই শব্দটি শুধুমাত্র দুইটি আয়াতে এসেছে। এই আয়াত দুইটি নিন্ম্রুপঃ
- اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ (6) এবং إِذْ دَخَلُوا عَلَى دَاوُودَ فَفَزِعَ مِنْهُمْ قَالُوا لَا تَخَفْ خَصْمَانِ بَغَى بَعْضُنَا عَلَى بَعْضٍ فَاحْكُمْ بَيْنَنَا بِالْحَقِّ وَلَا تُشْطِطْ وَاهْدِنَا إِلَى سَوَاءِ الصِّرَاطِ (22)
اهْدِنَا শব্দটি হতে প্রয়োজন হয় আলিফ, নুন, দাল, হা, আলিফ এবং উপরের আয়াত দুটিতে এরা ব্যবহৃত হয়েছে মোট আলিফ (২৩), নুন (৭ বার), দাল (৫ বার), হা (৩ বার), আলিফ (২৩ বার)। এদের যোগ করুণ। ২৩+৭৫+৩+২৩ = ৬১। আমরা আবার ৬১ পেলাম যা কিনা ১৮ তম মৌলিক সংখ্যা।
আলিফ | নুন | দাল | নুন | আলিফ |
২৩ বার | ৭ বার | ৫ বার | ৩ বার | ২৩ বার |
মানুষের ২৩ জোড়া ক্রোমজোম | ভ্রুণ থেক শিশু জন্ম পর্যন্ত ৭ টি স্তর। | মানুষের ৫ টি ইন্দ্রিয় এবং তা নিয়ন্ত্রণের জন্য ৫ ওয়াক্ত সালাত | মায়ের গর্ভ তিন স্তর বিশিষ্ট্য | মানুষের ২৩ জোড়া ক্রোমজোম |
যেন একটি শব্দে সমগ্র জীবন ব্যবস্থা।
এভাবে আরও অনেক গানিতিক সম্পর্ক আছে তবে সহজগুলোই উল্লেখ করলাম। যারা বলে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কোরআন রচনা করেছেন, তাদের কাছে প্রশ্ন, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কি একজন গনিতবিদ ছিলেন, যিনি ওহী বর্ননার সময় এত সতর্ক ছিলেন যে, সম্পুর্ন সুরা আলাকে এবং সুরা ফাতিহা এর একটি শব্দের মধ্যে অপুর্ব গানিতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছেন, অথচ ইতিহাস বলে তিনি পড়তেও জানতেন না এবং লিখতেও জানতেন না? যেখানে একজন শিক্ষিত মানুষের পক্ষেই এরকম সূরা তৈরী সম্ভব নয় সেখানে আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর আগে রাসুল (সঃ) কিভাবে এই কোরআনের সূরা রচনা করবেন অথচ তিনি লিখতেও জানতেন না এবং পড়তেও জানতেন না? নাউযুবিল্লাহ। কোরআন আল্লাহর বানী।