সুর্যের আলো (Sunlight)
বাইবেল অনুযায়ী প্রথমে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে এবং সুর্য তার পরে সৃষ্টি হয়েছে। বাইবেল অনুযায়ী স্রষ্টা প্রথম দিনে পৃথিবীতে দিন ও রাত্রি সৃষ্টি করেছেন। এরপর চতুর্থ দিনে সুর্য সৃষ্টি করেছে।
কিন্তু তা সম্ভব নয়। কারন, সুর্য না থাকলে পৃথিবীতে আলো আসবে কিভাবে? আর আলো না থাকলে পৃথিবীতে দিন ও রাত্রি সৃষ্টি হবে কিভাবে?
বাইবেলে ভুল থাকলেও কোরআনে কোন ভুল নেই। কোরআনে অনুযায়ী, সুর্য সৃষ্টির আগে সব আন্ধকার ছিল। কোরআনে (৮১:১) উল্লেখ আছে,
١ إِذَا الشَّمْسُ كُوِّرَتْ
অর্থঃ যখন সুর্যকে গুটিয়ে ফেলা হবে,
If the sun was made spherical.
উপরের আয়াতে ‘কুউইরাত’ শব্দের অর্থ হল, কোন কিছুকে গুটিয়ে ফেলা বা গোলাকার বলের আকারে পরিণত করা। আজকে আমরা আধুনিক বিজ্ঞানের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, সুর্যের কনাগুলো প্রথমে আনবিক মেঘের মত ছড়ানো ছিল। পরবর্তীতে ঐ মেঘের কনাগুলো আকর্ষনের কারনে ঘনীভূত হয়ে গোলাকার সুর্যে পরিনত হয়।
আমাদের এই সৌরজগত সৃষ্টির আগেও, সবকিছু আনবিক মেঘের মত ছড়ানো ছিল। পরে একটি সুপারনোভার কারনে যে শকওয়েভ সৃষ্টি হল তা ঐ আনবিক মেঘে আঘাত করল। তখনই আমাদের সৌরজগতের সুর্য এবং সব গ্রহগুলো আকৃতি পেতে শুরু করল।
সুর্যের এত উত্তাপের পেছনে প্রধান কারন হল ফিউশন বিক্রিয়া। কিন্তু, পৃথিবীর মত স্বাভাবিক তাপমাত্রা ও চাপে ফিউশন বিক্রিয়া হয়না। ফিউশন বিক্রিয়া শুরু হবার জন্য প্রচণ্ড চাপের প্রয়োজন হয়। কিন্তু, আনবিক মেঘ থেকে যখন সুর্য ধীরে ধীরে আকৃতি পাচ্ছিল, তখনও সুর্যের ফিউশন বিক্রিয়া তাৎক্ষণিক ভাবে শুরু হয়নি। কারন, ফিউশন বিক্রিয়া শুরুর জন্য যে প্রচণ্ড চাপের প্রয়োজন হয়, সেই চাপ তৈরির জন্য কিছু সময় লেগেছিল।
অর্থ্যাৎ, সুর্যে ফিউশন বিক্রিয়া হবার আগে আলো ছিলনা। কারন, ফিউশন বিক্রিয়া হতে প্রচণ্ড চাপের প্রয়োজন হয়। ঐ চাপ সৃষ্টি হতে কিছু সময় লাগছিল। অর্থ্যাৎ, আনবিক মেঘ থেকে রূপান্তরিত হয়ে এই সৌরজগতের সুর্য ও অন্যান্য গ্রহ ও উপগ্রহগুলো যখন আকৃতি নিচ্ছিল, তখন কিছু সময় সুর্য আলো দিচ্ছিলনা। কারন, আলোর জন্য ফিউশন বিক্রিয়া প্রয়োজন। ফিউশন বিক্রিয়ার জন্য প্রচণ্ড চাপ প্রয়োজন। প্রচণ্ড চাপের জন্য প্রচণ্ড মধ্যাকর্ষন শক্তি প্রয়োজন। প্রচণ্ড মধ্যাকর্ষন শক্তির জন্য প্রচুর ভরের ঘনীভূত হওয়া প্রয়োজন। আর এই কারনেই সুর্যের ফিউশন বিক্রিয়া শুরুর আগে সুর্যের ঘনীভুত হয়ে চাপ সৃষ্টি করতে কিছু সময় লেগেছিল এবং সেই সময়টি সুর্য আলো দিচ্ছিলনা। কোরআনে (১৭:১২) এ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
١٢ وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ آيَتَيْنِ ۖ فَمَحَوْنَا آيَةَ اللَّيْلِ وَجَعَلْنَا آيَةَ النَّهَارِ مُبْصِرَةً لِتَبْتَغُوا فَضْلًا مِنْ رَبِّكُمْ وَلِتَعْلَمُوا عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ ۚ وَكُلَّ شَيْءٍ فَصَّلْنَاهُ تَفْصِيلً
অর্থঃ আমি রাত ও দিনকে (আমার কুদরতের) দুটো নিদর্শন বানিয়ে রেখেছি, অতপর রাতের নিদর্শন আমি বিলীন করে দিয়েছি, এবং দিনের নিদর্শনকে আমি করেছি আলোকময়, যাতে করে এর আলোতে তোমরা তোমাদের মালিকের রিজিক সংগ্রহ করতে পার, (সর্বোপরি) তোমরা (এর মাধ্যমে) বছরের গননাও (এর) হিসাবও জানতে পার; আর (এর) সব কয়টি বিষয়ই আমি খুলে খুলে বর্ননা করছি।
We (Allah is one and only) have made the night and the day two wonders. We (Allah is one and only) erased the wonder of the night, and made the wonder of the day revealing, that you may seek bounty from your Lord, and know the number of years, and the calculation. We (Allah is one and only) have explained all things in detail.
উপরের আয়াতে ‘অতপর রাতের নিদর্শন আমি বিলীন করে দিয়েছি’ দ্বারা বুঝানো হচ্ছে সুর্যের মাধ্যমে দিন আসার আগে সৌরজগতে আন্ধকার ছিল। লক্ষ্য করার বিষয় হল এখানে সুর্য বা পৃথিবী বা অন্য কোন গ্রহের কথা উল্লেখ করা হয়নি। বরং, বলা হয়েছে, ‘অতপর রাতের নিদর্শন আমি বিলীন করে দিয়েছি, এবং দিনের নিদর্শনকে আমি করেছি আলোকময়’। অর্থ্যাৎ, প্রথমে অন্ধকার ছিল। পরে ফিউশন বিক্রিয়া হল। সুর্য আলো ছড়ালো এবং পৃথিবীতে দিন ও রাত্রি সৃষ্টি হল।
যারা বলে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কোরআন রচনা করেছেন তাদের কাছে প্রশ্ন তিনি কিভাবে ওই আমলে কোন আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়াই জানলেন যে, সুর্যের ফিঊশন বিক্রিয়ার আগে অন্ধকার ছিল এবং তারপর বিক্রিয়ার ফলে সূর্যের আলো সবদিকে ছড়িয়ে পড়ল? তিনি কি এ বিষয়ের উপর গবেষণা করে তারপর এই কোরআন রচনা করেছিলেন? নাউযুবিল্লাহ। কোরআন আল্লাহর বানী।