সময় আপেক্ষিক এবং ওয়ার্মহোল (Time is relative and Wormholes)
আইনেস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব থেকে জেনেছি, আমার এবং আপনার ঘড়ি একই গতিতে চলবে না। সময় বা আমার ঘড়ির কাটার ঘুর্নন গতি আসলে ত্বরণ বা মধ্যাকর্ষনের উপর নির্ভর করে। মনে করুন, আপনি এবং আমি দুইটি আলাদা মধ্যাকর্ষন ক্ষেত্রের মধ্যে আছি। আমার মধ্যাকর্ষন ক্ষেত্রটি আপনার মধ্যাকর্ষন ক্ষেত্রের থেকে প্রবল বা শক্তিশালী। তাহলে আমার ঘড়ি আপনার ঘড়ির থেকে আস্তে চলবে। অর্থ্যাত, ভর বেশি হলে মধ্যাকর্ষন ক্ষেত্র প্রবল বা শক্তিশালী হয় আর মধ্যাকর্ষন ক্ষেত্র প্রবল বা শক্তিশালী হলে সময় আস্তে চলে। অর্থ্যাত, দুটি নির্ভুল ঘড়ির একটি আছে পৃথিবীতে (কম ভর) আর অন্যটি আছে বৃহষ্পতি (বেশি ভর) গ্রহে। তাহলে, পৃথিবীতে মধ্যাকর্ষন ক্ষেত্র কম হবে এবং বৃহষ্পতিতে মধ্যাকর্ষন ক্ষেত্র বেশি হবে। আর একারনেই, পৃথিবীতে থাকা ঘড়িটি দ্রুত চলবে অর্থ্যাত, সময় আস্তে চলবে। আর অন্যদিকে, বৃহষ্পতিতে থাকা ঘড়িটি তুলনামুলক ভাবে আস্তে চলবে অর্থ্যাত, সময় আস্তে চলবে। সুতরাং, বলা যায় সময় আপেক্ষিক। কোরআনের (২২:৪৭) আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বেহেশত বা দোযখের একদিন হল পৃথিবীর ১০০০ বছরের সমান (১ দিন = ১০০০ বছর)। আমাদের দৃশ্যমান কাছের মহাকাশ ব্যতীত বাকী ছয় আসমানে বেহেশত বা দোযখ আছে, যাদের মাত্রা ভিন্ন হবার কারনে আমরা তাদের দেখতে পাইনা। আবার, ওয়ার্মহোলের (যা দিয়ে ফেরেশতারা দুরের রাস্তা অতি অল্প সময়ে অতিক্রম করে) একদিন হল পৃথিবীর ৫০,০০০ বছরের সমান (১ দিন = ৫০,০০০ বছর)। কোরআন অনুযায়ী ফেরেশতারা যখন মহাকাশের বিশাল বিশাল দুরত্বের পথ অতিক্রম করে তখন তাদের সময়ের হিসাব আমাদের সময়ের হিসাব থেকে আলাদা হয়। কোরআনে (৭০:৪) এ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে,
٤ تَعْرُجُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ
অর্থঃ ফেরেশতাকুল ও (তাদের নেতা জিবরাঈল) ‘রুহ’ আল্লাহর দিকে আরোহন করে এমন একদিনে, যার পরিমান পঞ্চাশ হাজার বছর।
The angels and the Spirit ascend to Him in a day, the measure of which is fifty thousand years.
এখানে সময়ের সাথে সময়ের তুলনা হচ্ছে। সময়ের সাথে দুরত্বের তুলনা হচ্ছে না। সময়ের সাথে সময়ের পার্থক্য হতে পারে দুইভাবে।
১. ফেরেশতারা তাদের ত্বরণ বাড়ানোর মাধ্যমে। ফেরেশতারা তাদের ত্বরণ বাড়িয়ে তাদের বেগ আলোর বেগের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে সময়ের সাথে সময়ের পার্থক্য তৈরী করতে পারে।
২. অথবা ফেরেশতারা প্রবল মধ্যাকর্ষন শক্তি বিশিষ্ট কোন ক্ষেত্রের (ওয়ার্মহোল) ভিতর দিয়ে গেলে।
মধ্যাকর্ষন ক্ষেত্রের বাইরে যা ঘটবেঃ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুযায়ী, দ্রুত গতিসম্পন্ন কোন ব্যক্তির অল্প সময় লাগে আর অল্প গতিসম্পন্ন কোন ব্যক্তির বেশি সময় লাগে। সময়ের পার্থ্যক্য নির্নয় করে এবং তা নিচের সুত্রে ব্যবহার করে আমরা একটি বস্তু কত গতিতে চলেছে তা নির্নয় করতে পারি। ফেরেশতাদের গতি আলোর গতির সমান কি না, তাও আমরা নিচের সুত্রের মাধ্যমে নির্নয় করতে পারি। মধ্যাকর্ষন ক্ষেত্রের বাইরে আলোর বেগ পরীক্ষা করে পাওয়া যায় যে, ফেরেশতাদের ছুটে চলার বেগ, আলোর বেগের প্রায় ৯৯.৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯৮১ শতাংশ।
এখানে,
∆to = ফেরেশতাদের অতিক্রম করা সময় (এক দিন)
∆t = মানুষের অতিক্রম করা সময় (৫০,০০০ বছর)
= ৫০,০০০ (বছর) X ১২ (চন্দ্র মাস) X ২৭.৩২১৬৬১ (দিন)
v = ফেরেশতাদের ছুটে চলার বেগ
c = আলোর গতি = ২৯৯৭৯২.৪৫৮ কিলোমিটার/সেকেন্ড
উপরের সমীকরন থেকে আমরা ফেরেশতাদের অজানা গতি নির্নয় করতে পারি,
অর্থ্যাত, v = ফেরেশতাদের বেগ = ২৯৯৭৯২.৪৫৭৯৯৯৯৯৯৪ কিলোমিটার/সেকেন্ড
= ৩,০০,০০০ কিলোমিটার/সেকেন্ড
= আলোর বেগের সমান (প্রায়)
সময়ের পার্থ্যক্য বা টাইম ডিলেশন থেকে বলা যায়, ফেরেশতাদের আলোর বেগ প্রাপ্ত হতে হলে, ত্বরণের মাধ্যমে বেগ বাড়াতে হয়। ফেরেশতারা হয়ত বেগ আরও বাড়াতে পারে। আল্লাহই ভাল জানেন।
কোরআনে ফেরেশতারা কিভাবে চলাচল করে (৩২:৫) সে বিষয়ে একটি আয়াত আছে।
٥ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الْأَرْضِ ثُمَّ يَعْرُجُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ أَلْفَ سَنَةٍ مِمَّا تَعُدُّونَ
অর্থঃ আসমান থেকে জমীন পর্যন্ত সবকিছু তিনিই পরিচালনা করেন, তারপর (সবকিছুকে) তিনি উপরের দিকে নিয়ে যাবেন (এমন) এক দিনে যার পরিমান তোমাদের গননায় হাজার বছর।
(Allah) Rules the cosmic affair from the heavens to the Earth. Then this affair travels to Him a distance in one day, at a measure of one thousand years of what you count.
কিন্তু, হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর যুগে গাড়ি, ট্রেন বা বিমান ছিলনা। তারা তখন কিলোমিটার বা মাইল দিয়ে দুরত্ব হিসাব করতনা। বরং, তারা হিসাব করত দিন হিসেবে। অর্থ্যাত, হেটে যেতে কতদিন লাগবে। তখন তারা চাঁদের হিসেবে বছর, মাস ও দিন গননা করত। চাঁদের অবস্থান অনুযায়ী দিনপঞ্জিকা বা ক্যলেন্ডার ব্যবহার করত। চাঁদের হিসেবে বার মাসে এক বছর। চাঁদের ক্যালেন্ডারের হিসেবে ১ বছরে ১২ মাস। এই চন্দ্রমাস আবার দুইভাবে মাপা হয়। একটি হল সুর্যের সাপেক্ষে আর অন্যটি হল মহাকাশের অন্য নক্ষত্রের সাপেক্ষে। মহাকাশের অন্য নক্ষত্রের সাপেক্ষে যে চন্দ্রমাস মাপা হয় তাকে সাইডরিয়েল মাস বলে। এবং এই হিসেবে ১ মাসে ২৭.৩ দিন। । সময়ের হিসাব চাঁদ অনুযায়ী হত। সুর্য অনুযায়ী নয়। অর্থ্যাত, উপরের ‘একদিন সমান হাজার বছর হবে’ হিসাবটিও চাঁদের হিসেবে হবে। সুর্যের হিসেবে নয়। যেহেতু, এই আয়াতটি দ্বারা মহাকাশের দুরত্ব বোঝানো হচ্ছে যেহেতু সবকিছুকে উপরের দিকে নিয়ে যাবার কথা বলা হচ্ছে। আর আল্লাহর হুকুম ফেরেশতারাই পালন করেন। সুতরাং, বলা যায় আলোর গতিতেই ফেরেশতারা চলাচল করে সবকিছুকে উপরের দিকে নিয়ে যাবে। চাঁদের ক্যালেন্ডারের হিসেবে ১ বছরে ১২ মাস। ১ মাসে ২৭ দিন। রাসুলের যুগে বেশি দুরত্বের সবকিছু চাঁদের হিসাব ও দিনের হিসাবে করা হত।
ফেরেশতাদের একদিনের অতিক্রান্ত পথ = পৃথিবীর হিসেবে ১০০০ বছরের অতিক্রান্ত পথ
= (১২ X ১০০০) বার চাঁদের ঘুর্ননে যে পথ অতিক্রান্ত হয়
= ১২,০০০ বার চাঁদের কক্ষপথ ঘুর্ননে যে পথ অতিক্রান্ত হয়
আর, আলোর বেগ = দুরত্ব / সময়
আর, আলোর বেগ = (১২,০০০ বার চাঁদের কক্ষপথ ঘুর্ননে যে পথ অতিক্রান্ত হয়) / (পৃথিবীর ১ দিন)
আর, আলোর বেগ = (১২,০০০ বার চাঁদের কক্ষপথ ঘুর্ননে যে পথ অতিক্রান্ত হয়) / (২৪ ঘণ্টা)
= ২৯৯৭৯২.৪৫৭৯৯৯৯৯৯৪ কিলোমিটার/সেকেন্ড (প্রায়)
= ৩,০০,০০০ কিলোমিটার/সেকেন্ড (প্রায়)
মধ্যাকর্ষন ক্ষেত্রের ভেতরে যা ঘটবেঃ যে পথ অতিক্রম করতে হাজার হাজার বছর লাগে, ফেরেশতারা ওয়ার্মহোলের ভিতর দিয়ে গেলে সেই রাস্তা কয়েক মিটারে পরিনত হয় এবং তা অতিক্রম করতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে।
কোরআন অনুযায়ী ফেরেশতারা এই ওয়ার্মহোল দিয়ে মহাকাশের যে কোন স্থানে যেতে পারে। সাধারণ মধ্যাকর্ষন ক্ষেত্রের বাইরে থেকে যদি কোন ব্যক্তি ঐ দিকে তাকায়, তাহলে দেখবে ফেরেশতারা আলোর গতিতে তাকে অতিক্রম করছে। তখন আলোর বেগ হবে প্রায় সেকেন্ডে ২৯৯৭৯২.৪৫৭৯৯৯৯৯৯৪ কিলোমিটার। আবার যখন কোন ব্যক্তি ওয়ার্মহোলের ভিতরে থেকে ওয়ার্মহোলের কারনে সৃষ্টি হওয়া মধ্যাকর্ষন ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে কোন ফেরেশতাকে ওয়ার্মহোলের দিকে আসতে দেখবে, তখনও সে দেখবে, ফেরেশতারা আলোর গতিতে ওয়ার্মহোলের দিকে আসছে ঠিকই, কিন্তু যখনই ফেরেশতা ওয়ার্মহোলে ঢুকবে, তখনই তার বেগ কমে যাবে। কারণ আমরা জানি, ভারী বস্তুর মধ্যাকর্ষন বেশি হবার কারনে সেখানে সময় আস্তে চলে। অন্যদিকে, কম ভরের বস্তুর মধ্যাকর্ষন কম হবার কারনে সেখানে সময় তাড়াতাড়ি চলে। ওয়ার্মহোলের ভিতরে আলোর গতি ১০ মিটার/সেকেন্ড হলে, ওয়ার্মহোলের ভিতরে থাকা ব্যক্তিটি দেখবে যে ফেরেশতারা ৯.৯৯৯৯৯৯ মিটার/সেকেন্ডে চলাচল করছে।
দুইটি মানুষের মধ্যে অল্প সময়ের পার্থক্য করানো সম্ভব হবে যদি তাদের একজন এই পৃথিবীতে থাকে এবং অন্যজন থাকে নিউট্রন নক্ষত্রে। অনেক বিজ্ঞানীদের মতে, ওয়ার্মহোল হল বহু দূরে থাকা দুইটি কৃষ্ণগহবর বা ব্ল্যাকহোলের মধ্যকার অদৃশ্য রাস্তা।
অল্প সময়ের পার্থক্য বা টাইম ডিলেশন হলে(১০০ বা হাজার বছর VS ১ দিন) ওয়ার্মহোলের দুইটি প্রান্ত বা প্রবেশপথ মিলিত হতে পারেনা। ফলে তখন ওয়ার্মহোল পরিপুর্নভাবে তৈরী হতে পারেনা। সুতরাং, কোরআনে যে সময়ের পার্থক্য বা টাইম ডিলেশনর (৫০,০০০ হাজার বছর VS ১ দিন) কথা বলা হয়েছে, তা ওয়ার্মহোলের কথাই বলছে। কারণ, নিউট্রন নক্ষত্র বা নিউট্রন নক্ষত্রের মত ভরের কোন নক্ষত্র ওয়ার্মহোলের মত এত শক্তিশালী মধ্যাকর্ষন ক্ষেত্র তৈরী করতে পারবেনা।
Quran 32.5 is time vs. distance; this gives us speed of angels which turned out to be the speed of light (1 day = 1000 years). However Quran 22.47 (1 day = 1000 years) and Quran 70.4(1 day = 50,000 years) are time vs. time (no distance); this is time dilation. Quran 22.47 compares time of Earth with time at Paradise/Hell (1 day vs. 1000 years). While Quran 70.4 compares time on Earth with time in wormholes (1 day vs. 50,000 years).
যারা বলে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কোরআন রচনা করেছেন তাদের কাছে প্রশ্ন তিনি কিভাবে জানলেন স্থানভেদে সময় আলাদা হতে পারে এবং কিভাবেই বা জানলেন আপেক্ষিতার তত্ত্বগুলো? তিনি কি এ বিষয়ের উপর গবেষণা করে তারপর এই কোরআন রচনা করেছিলেন? নাউযুবিল্লাহ। কোরআন আল্লাহর বানী।