মহাবিশ্বের বয়স (Age of Universe)
সময় আপেক্ষিক। আপেক্ষিকতার তত্ত্ব থেকে আমরা জেনেছি যে, আপনার এবং আমার ঘড়ির কাটার ঘুর্নন গতি আলাদা হবে যদি আমরা ভিন্ন ভিন্ন দুটি মধ্যাকর্ষনে থাকি। ভর বেশি হলে বা মধ্যাকর্ষন শক্তিশালী হলে সময় আস্তে চলে। আবার, অন্যদিকে ভর কম হলে বা মধ্যাকর্ষন দুর্বল হলে সময় দ্রুত চলে।
কোরআনের (২২:৪৭) আয়াতে পৃথিবীর সময়ের সাথে বেহেশত ও দোযখের সময়ের তুলনা করা হয়েছে (বেহেশত ও দোযখের ১ দিন = পৃথিবীর ১০০০ বছর)। আবার, কোরআনের (৭০:৪) আয়াতে পৃথিবীর সময়ের সাথে ওয়ার্মহোলের সময়ের তুলনা করা হয়েছে (ওয়ার্মহোলের ১ দিন = পৃথবীর ৫০,০০০ বছর)।
আপেক্ষিকতার তত্ত্ব থেকে আমরা জেনেছি যে, যেখানে ভর বেশি সেখানে সময় আস্তে চলে। আবার, যেখানে ভর কম সেখানে সময় দ্রুত চলে। যেহেতু, বেহেশত ও দোযখের ১ দিন = পৃথিবীর ১০০০ বছর, সুতরাং, বলা যায়, বেহেশত ও দোযখের ভর পৃথিবীর ভরের তুলনায় অনেক বেশি। কোরআনে (২২:৪৭) এ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে,
٤٧ وَيَسْتَعْجِلُونَكَ بِالْعَذَابِ وَلَنْ يُخْلِفَ اللَّهُ وَعْدَهُ ۚ وَإِنَّ يَوْمًا عِنْدَ رَبِّكَ كَأَلْفِ سَنَةٍ مِمَّا تَعُدُّونَ
অর্থঃ হে নবী, এরা তোমার কাছে আযাবের ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করে তুমি বলো, আল্লাহ তায়ালা কখনো তার ওয়াদার বরখেলাপ করেননা, তোমার মালিকের কাছে যা একদিন, তা তোমাদের গণনার হাজার বছরের সমান।
They challenge you to bring forth that torture [in Hell] and Allah will not break His promise; a day of your Lord [Paradise/Hell promise] is like a thousand years of what you count.
উপরের আয়াতে কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বেহেশত বা দোজখের একদিন, আমাদের পৃথিবীর হাজার বছরের সমান। আবার, আপেক্ষিকতার তত্ত্ব থেকে আমরা জানতে পেরেছি, ভর বেশি হলে সময় আস্তে চলে এবং ভর কম হলে সময় দ্রুত চলে। যেহেতু, পৃথিবীর তুলনায় বেহেশত বা দোজখের সময় আস্তে চলে, সেহেতু, পৃথিবীর তুলনায় বেহেশত বা দোজখের ভর বেশি।
বিজ্ঞানীদের গননায় আমাদের সৌরজগতের বয়স প্রায় ৪.৫৭ বিলিয়ন বছর। অর্থ্যাত, পৃথিবী ও আশেপাশের গ্রহ গুলো আনবিক মেঘ থেকে ঘনীভূত হওয়া শুরু করল প্রায় ৪.৫৭ বিলিয়ন বছর আগে। আবার, বিজ্ঞানীদের হিসেবে এই মহাবিশ্বের বয়স প্রায় ১৩.৭ ± ০.২ বিলিয়ন বছর।
অর্থ্যাত, এই সৌরজগত বা পৃথিবীর বয়স হল মহাবিশ্বের বয়সের প্রায় তিন ভাগের একভাগ (৪.৫৭ / ১৩.৭ = ১/৩)। আবার, কোরআন অনুযায়ী পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে ২ দিনে। এবং বেহেশত, দোজখ সহ বাকী সবকিছু সৃষ্টি হয়েছে ৬ দিনে। এখানেও, হিসাব অনুযায়ী পৃথিবীর বয়স হল মহাবিশ্বের বয়সের তিন ভাগের একভাগ (২/৬ = ১/৩)।
কোরআনে এ বিষয়ে আয়াত (৭:৫৪) আছে। আমরা সবকিছু হিসাব করি পৃথিবীর সময়কে মুল বা প্রধান হিসেবে ধরে। কিন্তু, কোরআন অনুযায়ী, সবকিছুর মুল বা প্রধান হল আল্লাহর আরশ বা সিংহাসন। সুতরাং, সকল সৃষ্টির (এমনকি সময়) শুরু আল্লাহর আরশ থেকে বা সিংহাসন থেকে। পৃথিবী থেকে নয়। সকল রকমের স্থান, কাল ও পাত্র থেকে আল্লাহ পবিত্র এবং অনেক উর্দ্ধে।
٥٤ إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ ۗ أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ ۗ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ
অর্থঃ অবশ্যই তোমাদের মালিক আল্লাহ তায়ালা, যিনি ছয়দিনে আসমানসমূহ ও জমীন সৃষ্টি করেছেন, অতপর তিনি আরশের উপর অধিষ্ঠিত হন…
অর্থ্যাত, আল্লাহর আরশ বা সিংহাসনের বয়স সবচেয়ে বেশি। আল্লাহর হুকুমেই সকল কিছুর সৃষ্টি হয়েছিল। অর্থ্যাত, বিগব্যঙ্গের আগেও আল্লাহ ছিলেন এবং আল্লাহর হুকুম ছিল? আর হুকুম না আসলে বিগব্যাং সৃষ্টি হবার কথা নয়।
অপর একটি আয়াতে (৪১:৯) পৃথিবীর বয়সের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
٩ قُلْ أَئِنَّكُمْ لَتَكْفُرُونَ بِالَّذِي خَلَقَ الْأَرْضَ فِي يَوْمَيْنِ وَتَجْعَلُونَ لَهُ أَنْدَادًا ۚ ذَٰلِكَ رَبُّ الْعَالَمِينَ
অর্থঃ (হে নবী) তুমি বলো, তোমরা কি তাকে অস্বীকার করতে চাও, যিনি দুইদিনে পৃথিবীকে পয়দা করেছেন, এবং তোমরা (অন্য কাউকে) কি তারই সমকক্ষ হিসেবে দাড় করাতে চাও? (অথচ) এই হচ্ছেন সৃষ্টিকুলের মালিক।
Say: “Is it that you deny Him [Allah] who created the Earth in two days? And you claim others to be equal to Him? He is the Lord of (all) the Worlds.”
অন্য আরেকটি আয়াতে (৫০:৩৮) বেহেশত ও দোজখের বয়সের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
٣٨ وَلَقَدْ خَلَقْنَا السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ وَمَا مَسَّنَا مِنْ لُغُوبٍ
অর্থঃ আমি আকাশমালা, পৃথিবী ও উভয়ের মধ্যবর্তী যা কিছু আছে তার সবকিছু ছয়দিনে সৃষ্টি করেছি, কোন ধরেনের ক্লান্তিই আমাকে স্পর্শ করেনি।
And we (Allah is one and only) have created the Heavens and Earth and EVERYTHING IN BETWEEN in six days and We (Allah is one and only) were not touched by fatigue.
সবকিছু সৃষ্টির মুল ভিত্তি হল আল্লাহর আরশ বা সিংহাসন। পৃথিবী নয়। কোরআন অনুযায়ী পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে ২ দিনে। এবং বেহেশত, দোজখ সহ বাকী সবকিছু সৃষ্টি হয়েছে ৬ দিনে। এখানে, হিসাব অনুযায়ী পৃথিবীর বয়স হল মহাবিশ্বের বয়সের তিন ভাগের একভাগ (২/৬ = ১/৩)।
আমরা মুসলমানরা বিশ্বাস করি, আল্লাহ তায়ালাই আমাদের সকল প্রাণী ও জীব জগতকে জীবিত রেখেছেন। তিনি জড় জগতেরও ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছেন। প্রাণী ও জীব জগত সহ সকল জড় জগতের ভারসাম্য রক্ষার যে নির্দেশ আল্লাহ ফেরেশতাদের দিয়ে রেখেছেন, তা পৃথিবী সৃষ্টির অনেক আগেই আল্লাহর সুরিক্ষিত করা কোন গ্রন্থ বা কিতাবে (আধুনিক ধারনা অনুযায়ী কোন কম্পিউটার বা ট্যাবলেটে) লিপিবদ্ধ করা আছে। কোরআন অনুযায়ী আল্লাহর হুকুম ছাড়া গাছের একটি পাতাও নড়েনা এবং সবকিছুই আল্লাহর সুরিক্ষিত করা কোন গ্রন্থ বা কিতাবে (আধুনিক ধারনা অনুযায়ী কোন কম্পিউটার বা ট্যাবলেটে) লিপিবদ্ধ করা আছে। কোরআন অনুযায়ী, পৃথিবী সৃষ্টির অনেক আগেই মহান আল্লাহ আমাদের সকল চাওয়ার জবাব দিয়ে রেখেছেন। সৃষ্টির পর প্রথম চারদিনে (লম্বা সময়), যখন পৃথিবী ধোঁয়ার মত ছিল, তখনই আল্লাহ আমাদের সকল চাওয়ার জবাব দিয়ে দিয়েছেন। এবং আল্লাহর সেই সুরক্ষিত হুকুমগুলো তখন থেকে আজ পর্যন্ত ফেরেশতারা পালন করে আসছেন এবং করতে থাকবেন। সুতরাং, আমরা বর্তমানে আছি। আর আমরা ভবিষ্যতে যা যা করব বা করতে পারি (আল্লাহ মানুষকে মুক্ত ইচ্ছা দিয়েছেন), তার সবই আল্লাহ পৃথিবী সৃষ্টির আগেই অতীতে লিখে রেখেছেন। আল্লাহ অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সবই জানেন। এজন্যই তিনি সময়ের উর্দ্ধে। কিন্তু আমরা সময়ের অধীন। অর্থ্যাত, আল্লাহ আমাদের ভবিষ্যতের সবকিছু জানেন কিন্তু আমরা আমাদের ভবিষ্যত জানিনা। কোরআনে, এ বিষয়ে একটি আয়াত (৪১:৯-১২) আছে,
١٠ وَجَعَلَ فِيهَا رَوَاسِيَ مِنْ فَوْقِهَا وَبَارَكَ فِيهَا وَقَدَّرَ فِيهَا أَقْوَاتَهَا فِي أَرْبَعَةِ أَيَّامٍ سَوَاءً لِلسَّائِلِينَ
١١ ثُمَّ اسْتَوَىٰ إِلَى السَّمَاءِ وَهِيَ دُخَانٌ فَقَالَ لَهَا وَلِلْأَرْضِ ائْتِيَا طَوْعًا أَوْ كَرْهًا قَالَتَا أَتَيْنَا طَائِعِينَ٩ قُلْ أَئِنَّكُمْ لَتَكْفُرُونَ بِالَّذِي خَلَقَ الْأَرْضَ فِي ١٢ فَقَضَاهُنَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ فِي يَوْمَيْنِ وَأَوْحَىٰ فِي كُلِّ سَمَاءٍ أَمْرَهَا ۚ وَزَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَحِفْظًا ۚ ذَٰلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِيَوْمَيْنِ وَتَجْعَلُونَ لَهُ أَنْدَادًا ۚ ذَٰلِكَ رَبُّ الْعَالَمِينَ
অর্থঃ (হে নবী) তুমি বলো, তোমরা কি তাকে অস্বীকার করতে চাও যিনি দুদিনে পৃথিবীকে পয়দা করেছেন, এবং তোমরা (অন্য কাউকে) কি তারই সমকক্ষ হিসেবে দাড় করাতে চাও? (অথচ) এই হচ্ছেন সৃষ্টি কূলের মালিক। তিনি এ (যমীনের) মাঝে এর উপর থেকে পাহাড় সমূহ গেড়ে দিয়েছেন ও তাতে বহুমুখী কল্যান রেখে দিয়েছেন এবং তাতে (সবার) আহারের পরিমান নির্ধারন করেছেন, (এসব তিনি সম্পন্ন করেছেন) চারদিন সময়ের ভিতর; অনুসন্ধানীদের জন্য সেখানে (সবকিছু) সমান সমান (মজুদ রয়েছে)। অতপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করলেন, যা (তখন) ছিল ধুম্রকুঞ্জ বিশেষ, এরপর তিনি তাকে ও যমীনকে আদেশ করলেন, তোমরা উভয়েই এগিয়ে এসো-ইচ্ছায় হোক কিংবা অনিচ্ছায়; তারা উভয়েই বলল, আমরা অনুগত হয়েই এসেছি। (এই) একই সময়ে তিনি দুদিনের ভিতর এ (ধুম্রকুঞ্জ)কে সাত আসমানে পরিণত করলেন এবং প্রতিটি আকাশে তার (উপযোগী) আদেশনামা পাঠালেন,
অর্থ্যাত, আল্লাহর কোন শুরু নেই। তার আরশ বা সিংহাসনই বিবেচনার মুল ভিত্তি। এবং তার কাছেই আমাদের সবাইকে ফিরে যেতে হবে। আল্লাহর হুকুমেই সকল কিছুর সৃষ্টি।
বেহেশত ও দোযখ সহ সবকিছু (আকাশ ও পৃথিবীর) সৃষ্টি হয়েছে ৬ দিনে আর পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে ২ দিনে। সুতরাং, বলা যায়, পরিশেষে, আমি নিকটবর্তী আসমানকে তারকারাজি দ্বারা সাজিয়ে দিলাম এবং (তাকে শয়তান থেকে) সুরক্ষিত করে দিলাম, এসব (পরিকল্পনা) অবশ্যই পরাক্রমশালী ও সর্বজ্ঞ আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক (আগে থেকেই) সুবিন্যস্ত করে রাখা হয়েছিল।
আল্লাহর আরশের সময় থেকে বেহেশত ও দোযখের সময় দ্রুত। আর বেহেশত ও দোযখের সময় থেকে পৃথিবীর সময় দ্রুত। গনিতের ভাষায়,
আল্লাহর আরশের সময়ের গতি < বেহেশত ও দোযখের সময়ের গতি < পৃথিবীর সময়ের গতি
আল্লাহর আরশের ভর > বেহেশত ও দোযখের ভর > পৃথিবীর ভর
আল্লাহর আরশের মধ্যাকর্ষন শক্তি > বেহেশত ও দোযখের মধ্যাকর্ষন শক্তি > পৃথিবীর মধ্যাকর্ষন শক্তি।
তবে উপরের বিষয়গুলো নিশ্চিত করে বলার কোন সুযোগ নেই। কারণ, ঐ সকল স্থানে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ব্যতীত অন্য কোন মানুষ বা জিন যেতে পারেনি। ঐ সকল স্থানে পদার্থ বিজ্ঞানের সুত্রগুলো হয়ত আলাদা। আল্লাহই ভাল জানেন।
পরিশেষে বলতে হয়, সময় হল আপেক্ষিক। ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন দর্শকের কাছে সময়ের পরিমাপ ভিন্ন ভিন্ন হবে। পৃথিবীর সময়ের সাথে বেহেশত ও দোযখের সময় মিলবেনা। ঠিক একই রকম্ভাবে, বেহেশত ও দোযখের সময়ের সাথে সাত আসমানের উপর অবস্থিত আল্লাহর আরশের সময় মিলবেনা। কোরআনেও তাই বলা হয়েছে। কোরআনে ভিন্ন ভিন্ন স্থানের সময়কে অনুপাত আকারে দেখানো হয়েছে। অর্থ্যাত, কোরআনই সঠিক। কোরআনে উল্লিখিত সময় সম্পর্কিত আয়াতগুলো নিন্মরূপ,
Quran 32.5 is time vs. distance; this gives us speed of angels which turned out to be the speed of light. However Quran 22.47 and Quran 70.4 are time vs. time (no distance); this is time dilation. Quran 22.47 compares time of Earth with time at Paradise/Hell (1 day vs. 1000 years). While Quran 70.4 compares time on Earth with time in wormholes (1 day vs. 50,000 years).
যারা বলে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কোরআন রচনা করেছেন তাদের কাছে প্রশ্ন তিনি কিভাবে জানলেন সময় আপেক্ষিক ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন দর্শকের কাছে সময়ের পরিমাপ ভিন্ন ভিন্ন হবে? তিনি কি এ বিষয়ের উপর গবেষণা করে তারপর এই কোরআন রচনা করেছিলেন? নাউযুবিল্লাহ। কোরআন আল্লাহর বানী।