দূরের ছায়াপথগুলোতে লাল বিকিরনের পরিবর্তন (Redshifting)

Redshifting

দূরের ছায়াপথগুলোতে লাল বিকিরনের পরিবর্তন (Redshifting)

যখন অনেক দূর থেকে কোন আলোর উৎস নির্দিষ্ট কোন দর্শকের দিকে আসতে থাকে, তখন ঐ দর্শকের কাছে ঐ আলোকে নীল রঙের মনে হয়। আবার যখন অনেক দূর থাকা কোন আলোর উৎস নির্দিষ্ট কোন দর্শক থেকে দূরে সরে যেতে থাকে, তখন ঐ দর্শকের কাছে ঐ আলোকে লাল রঙের মনে হয়। যখন আলোর উৎসটি আস্তে আস্তে সরে তখন হালকা লাল রঙ মনে হয় আর যখন দ্রুত সরে, তখন লাল রঙ গাঢ় থেকে আরও গাঢ় হতে থাকে।

সম্প্রতি আমরা আধুনিক বিজ্ঞানের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, সম্প্রসারণশীল এই মহা বিশ্বে গ্যালাস্কিগুলো বা ছায়াপথগুলো পরস্পর পরস্পরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অর্থ্যাৎ একটি আর একটি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। যে ছায়াপথগুলো যতদুরের সেগুলো দেখতে তত লাল দেখায়। আর যে ছায়াপথগুলো যত দ্রুততার সাথে দূরে সরে যায়, সেগুলো তত গাঢ় লাল রঙের আলো বিকিরন করে, ফলে সেগুলোকে দর্শক আরও গাঢ় লাল রঙ হিসেবে দেখতে পায়। অর্থ্যাৎ, দুরত্ব বাড়ার সাথে সাথে রঙ হালকা লাল থেকে গাঢ় লাল হতে থাকে। অর্থ্যাৎ, লাল রঙের গাঢ়ত্ব বাড়া দুরত্ব বাড়ার সাথে সম্পর্কিত। সুতরাং, বলা যায়, গ্যালাস্কিগুলো বা ছায়াপথগুলোর লাল রঙের গাঢ়ত্ব, আমাদের থেকে ঐ গ্যালাস্কিগুলো বা ছায়াপথগুলোর দুরত্বের একটি ফাংশন। কোরআনে এ বিষয়ে (৫৫:৩৭) উল্লেখ করা হয়েছে।

٣٧  فَإِذَا انْشَقَّتِ السَّمَاءُ فَكَانَتْ وَرْدَةً كَالدِّهَانِ

অর্থঃ যখন আসমান ফেটে যাবে অতপর তখন তা লাল চামড়ার মত রক্তবর্ন হয়ে পরবে।

If the heaven ripped and it were a rose like paint

উপরের আয়াতে আসমান ফেটে লাল রঙ হবার কথা বলা হয়েছে। আবার অনেকে এটাকে গোলাপের লাল রঙয়ের সাথেও তুলনা করেছেন। মহাবিশ্ব যে সপ্রসারনশীল, তা একটি ছোট উদাহরণ দিলে বুঝতে সহজ হবে। একটি ফুটন্ত গোলাপের কথা চিন্তা করুন। গোলাপের বাইরের পাপড়িগুলো বেশি ছড়ানো কিন্তু ভেতরের পাপড়িগুলো তুলনামুলকভাবে কম ছড়ানো। আর একদম কেন্দ্রের পাপড়িগুলো খুবই কম ছড়ানো। সেগুলো বলতে গেলে প্রায় খাড়া হয়ে থাকে। এবার আমাদের পৃথিবীতাকে ঐ গোলাপের কেন্দ্রে ভাবুন এবং ভাবুন গোলাপের পাপড়িগুলো হল একেকটা গ্যালাস্কি বা ছায়াপথ। আমরা গোলাপের কেন্দ্রে এবং গ্যালাস্কিগুলো গোলাপের পাপড়ির মতই আমাদের ঘিরে রেখেছে। গোলাপের কাছের পাপড়িগুলোর তুলনায় যেমন দূরের পাপড়িগুলো বেশি ছড়ানো, তেমনি আমাদের কাছের গ্যালাস্কিগুলোর তুলনায় দূরের গ্যালাস্কিগুলো আমাদের থেকে দ্রুত সরে যাচ্ছে। যে গ্যালাস্কির দুরত্ব যত বেশি, আমাদের থেকে সে গ্যালাস্কিটি তত বেশি দ্রুত সরে যাচ্ছে। কাছের গ্যালাক্সিগুলো তুলনামুলকভাবে কম লাল রঙ এবং দূরের গ্যালাক্সিগুলো বেশি লাল রঙ বিকিরণ করে।

একটি অ্যামবুলেন্স যখন দূর থেকে শব্দ করতে করতে আমাদের কাছে আসতে থাকে, তখন ধীরে ধীরে অ্যামবুলেন্সের শব্দ বাড়তে থাকে। আবার অ্যামবুলেন্সটি যখন আমাদের নিকট থেকে দূরে সরে যেতে থাকে, তখন ধীরে ধীরে অ্যামবুলেন্সের শব্দ কমতে থাকে। ঠিক একইরকম ভাবে, যখন কোন আলোর উৎস আমাদের আছে আসতে থাকে এবং আমাদের থেকে দূরে সরে যেতে থাকে, তখন তাদের রঙ পরবর্তন হয়। আলোর উৎস দূর থেকে আমাদের দিকে আসতে থাকলে নীল রঙ দেখায় আর আলোর উৎস আমাদের নিকট থেকে  সরে যেতে থাকলে লাল রঙ দেখায়।

আমাদের গ্যালাস্কির নাম মিল্কিওয়ে। আমাদের পৃথিবীকে কেন্দ্র করে গ্যলাক্সিগুলো আমাদের চারপাশ থেকে গোলাপের পাপড়িগুলোর মত ঘিরে আছে। কাছের গ্যালাক্সিগুলো তুলনামূলকভাবে আমাদের থেকে ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। কিন্তু দূরের গ্যালাক্সিগুলো দ্রুততার সাথে আমাদের থেকে ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। এজন্য কাছের গ্যালাক্সিগুলো তুলনামুলকভাবে কম লাল এবং দূরের গ্যালাক্সিগুলো বেশি লাল রঙ বিকিরণ করে। অর্থ্যাৎ সব জায়গায় সমান লাল রঙ নয়। কোথাও বেশি আবার কোথাও কম।

যারা বলে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কোরআন রচনা করেছেন তাদের কাছে প্রশ্ন তিনি কিভাবে জানলেন আকাশের রঙ লাল হয়ে যেতে পারে অর্থ্যাত দূরের গ্যালাক্সিগুলো লাল আলো বিকিরিন করে? তিনি কি এ বিষয়ের উপর গবেষণা করে তারপর এই কোরআন রচনা করেছিলেন? নাউযুবিল্লাহ কোরআন আল্লাহর বানী।

Author: moq@2020@

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *