ওয়ার্মহোল (Wormholes)
যারা মহাকাশ নিয়ে পড়াশোনা করতে ভালবাসেন, তাদের অনেকেই ওয়ার্মহোলের নাম শুনেছেন। ফেরেশতারা মহাকাশের বিশাল বিশাল দুরত্ব অত্যন্ত কম সময়ে অতিক্রম করার জন্য ওয়ার্মহোল ব্যবহার করেন। সুতরাং, বলা যায়, ওয়ার্মহোল হল মহাকাশের বিশাল বিশাল দুরত্ব অত্যন্ত কম সময়ে অতিক্রম করার শর্টকাট রাস্তা।
আপেক্ষিকতা তত্ত্বের ব্যাখ্যা থেকে আমরা জানতে পারি, মহাকাশের বহু আলোকবর্ষের দুরত্বকে মাত্র কয়েক মিটার দুরত্বে পরিণত করার শর্টকাট রাস্তা আছে। বিজ্ঞানী আইনেস্টাইন এই শর্টকাট রাস্তাকে মহাকাশের ব্রিজ বা সুড়ঙ্গ পথ বলে উল্লেখ করেন। যেখানে শত শত বছর লাগার কথা, সেখানে ঐ শর্টকাট রাস্তা দিয়ে গেলে লাগবে মাত্র কয়েক সেকেন্ড। আর আধুনিক বিজ্ঞানে ঐ রাস্তাকে বলে ওয়ার্মহোল।
আল্লাহ তায়ালা তার ফেরেশতাদেরকে মহাবিশ্বের বিশাল বিশাল দুরত্ব, চোখের পলকেই যাতায়াত করার বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছেন। কোরআনে এই শর্টকাট রাস্তাকে ‘মারিজ’ নামে উল্লেখ করা হয়েছে এবং বল হয়েছে ফেরেশতারা এই সকল রাস্তাকে কিভাবে ব্যবহার করে। বর্তমানে মুসলমানরা এই শর্টকাট রাস্তাকে ‘মারিজ’ নামেই জানে। আর বিজ্ঞানীরা একে বলে ওয়ার্মহোল।
ওয়ার্মহোলের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে কোন শক্তির প্রয়োজন হয়না। আপনি যদি একটি রকেটে চড়ে ওয়ার্মহোলের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে চান, তাহলে ওয়ার্মহোলের প্রবেশ পথে ঢুকে যদি রকেটের ইঞ্জিন বন্ধও করে দেন, তাহলেও আপনি অন্য প্রান্তে পৌঁছে যাবেন। ঐ সুড়ঙ্গ পথের ভিতরে যে মধ্যাকর্ষন শক্তি আছে, সেই শক্তিই আপনাকে সুড়ঙ্গ পথের এক প্রান্ত থেকে টেনে অন্য প্রান্তে নিয়ে পৌঁছে দিবে। আপনি শুধুমাত্র সাগরের ঢেউয়ের মত একটি ধাক্কা অনুভব করবেন। এ যাত্রায় মধ্যাকর্ষন শক্তি আপনার ঘড়ির কাটার গতিকে কমিয়ে দিবে এবং আপনার রকেটের দৈর্ঘকে সংকুচিত করে দিবে। দূর থেকে কেউ যদি এই দৃশ্য দেখে তাহলে তার কাছে মনে হবে যেন, রকেটের গতি বৃদ্ধির হার, রকেটের শক্তি এবং রকেটের ভর – এই তিনটি বৈশিষ্ট্যই বাড়ছে। যখনই আপনি ওয়ার্মহোলের অন্য প্রান্তে পৌছাবেন, তখন ঘড়ির কাটা, রকেটের গতি বৃদ্ধির হার, রকেটের শক্তি এবং রকেটের ভর সবকিছুই প্রথম অবস্থার মত স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
٤ تَعْرُجُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ
٣ مِنَ اللَّهِ ذِي الْمَعَارِجِ
কোরআনে (৭০:০৩-০৪) এ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
অর্থঃ এ আযাব আসবে সমুন্নত মর্যাদার অধিকারী আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে; ফেরেশতাকুল ও (তাদের নেতা জিবরাঈল) রুহ আল্লাহর দিকে আরোহণ করে এমন এক দিনে যার পরিমান পঞ্চাশ হাজার বছর।
(a penalty) from Allah (who owns) wormholes [Ma’arej in Arabic] The angels and the Spirit ascend to Him in a day, the measure of which is fifty thousand years.
উপরের আয়াতে ‘মায়ারিজ’ শব্দের অর্থ হল ওয়ার্মহোল। এবং সমুন্নত মর্যাদার অধিকারী আল্লাহ তায়ালাই এই ওয়ার্মহোলের স্রষ্টা।
যে কেউই এই ওয়ার্মহোলের ভিতর দিয়ে যাবে, সেই সময়ের এই পরিবর্তন বা সময়ের এই তারতম্য ধরতে পারবে। কোরআনে উল্লিখিত হিসাব অনুযায়ী ওয়ার্মহোলের ভিতরের একদিন, পৃথিবীতে ৫০,০০০ বছরের সমান। সময়ের তারতম্যের কারনে ফেরেশতাদের শারীরিক কোন পরিবর্তন হয়না কারণ তারা আলোর তৈরী। সময়ের এই তারতম্য কিন্তু এটা বলে না যে, ওয়ার্মহোলের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে কত সময় লাগবে। বরং, এটা বলে, আপনি যদি ওয়ার্মহোলের ভেতর দিয়ে যান তাহলে, আপনার বয়স (ওয়ার্মহোল : পৃথিবী = ১ : ৫০,০০০) অনুপাতে পরিবর্তিত হবে।
আমরা মুসলমানরা বিশ্বাস করি, শুধুমাত্র ফেরেশতারাই নয় বরং আমাদের শেষনবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) ঈসরা ও মিরাজ যাত্রার সময় ওয়ার্মহোলের ভিতর দিয়েই আল্লাহর আরশের কাছাকাছি গিয়েছিলেন এবং জান্নাত ও জাহান্নাম দেখে এসেছিলেন।
কোরআনে বলা হয়েছে যে, ওয়ার্মহোল মহাকাশের ভিতর এমন একটি পথ বা দরজা, যা দিয়ে কোটি কোটি আলোকবর্ষের দুরত্ব মাত্র কয়েক মিটারের দুরত্বে পরিণত হয়।
কিন্তু অবিশ্বাসীদের জন্য আল্লাহ এই দরজা খুলবেননা। কারণ, অবিশ্বাসীরা যদি মহাকাশের এই কোটি কোটি আলোকবর্ষের দুরত্ব, মাত্র কয়েক মিটারের দুরত্বে পরিণত হওয়ার ফলে অতি অল্প সময়ে সেই বিশাল পথ পাড়ি দিয়ে ফেলে, তবুও তারা বিশ্বাস করবেনা। বরং তারা মনে করবে তাদের দৃষ্টিভ্রম হয়েছে। কোরআনে (১৫:১৩-১৭) এ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
١٣ لَا يُؤْمِنُونَ بِهِ ۖ وَقَدْ خَلَتْ سُنَّةُ الْأَوَّلِينَ١٤ وَلَوْ فَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَابًا مِنَ السَّمَاءِ فَظَلُّوا فِيهِ يَعْرُجُونَ١٥ لَقَالُوا إِنَّمَا سُكِّرَتْ أَبْصَارُنَا بَلْ نَحْنُ قَوْمٌ مَسْحُورُونَ١٦ وَلَقَدْ جَعَلْنَا فِي السَّمَاءِ بُرُوجًا وَزَيَّنَّاهَا لِلنَّاظِرِينَ١٧ وَحَفِظْنَاهَا مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ رَجِيمٍ
অর্থঃ এরা কোন অবস্থায়ই তার উপর ঈমান আনবেনা। আসলে এ নিয়মতো আগের মানুষদের থেকেই চলে এসেছে। আমি যদি এদের উপর আসমানের দরজাও খুলে দেই, তারপর তারা যদি তাতে চড়তেও শুরু করে, (তারপরও এরা ঈমান আনবেনা)। বরং বলবে, আমাদের দৃষ্টিই মোহাবিষ্ট হয়ে গেছে। কিংবা আমরা হচ্ছি এক জাদুগ্রস্থ সম্প্রদায়। (তাকিয়ে দেখ, কিভাবে) আমি আকাশে গম্বুজ তৈরী করে রেখেছি। অতপর তাকে দর্শকের জন্য (তারকারাজি দ্বারা) সুসজ্জিত করে রেখেছি, তাকে আমি প্রতিটি অভিশপ্ত শয়তানের থেকে হেফাযত করে রেখেছি।
They do not believe the Message, like those who preceded them; Even if We [Allah is one and only] opened upon them from the heaven a door and they continued passing through it they would say ‘Our sight is intoxicated, rather we have been bewitched’. It is We [Allah is one and only] who have made towering structures in the heavens and made them beautiful for beholders. And We [Allah is one and only] protected them from every evil spirit accursed.
আল্লাহ বিশ্বাসীদের জন্য ওয়ার্মহোল বা আকাশের দরজা খুলে দিবেন কিন্তু অবিশ্বাসীদের জন্য ওয়ার্মহোল বা আকাশের দরজা খুলবেন না। অন্য একটি আয়াতেও (৭:৪০) এই কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
٤٠ إِنَّ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَاسْتَكْبَرُوا عَنْهَا لَا تُفَتَّحُ لَهُمْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَلَا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ الْجَمَلُ فِي سَمِّ الْخِيَاطِ ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُجْرِمِينَ
অর্থঃ অবশ্যই যারা আমার আয়াতসমুহকে অস্বীকার করেছে এবং দম্ভ ভরে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তাদের জন্য কখনও (রহমত ভরা) আসমানের দরজা খুলবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত একটি সুচের ছিদ্রপথ দিয়ে একটি উট প্রবেশ করতে না পারবে, ততোক্ষণ পর্যন্ত এরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা; আমি এভাবেই অপরাধীদের প্রতিফল দিয়ে থাকি।
Those who reject Our revelations and are too arrogant to uphold them, the doors of Heaven will not be opened for them, nor will they enter Paradise, until the camel passes through the eye of the needle. Thus We [Allah is one and only] repay the guilty.
উপরের আয়াতে উল্লিখিত উট একটি সুচের ছিদ্রপথ দিয়ে তখনই যেতে পারবে যখন উটের দৈর্ঘ সংকোচন হবে। এবং আমারা জানি, দৈর্ঘ সংকোচনের ঘটনা ওয়ার্মহোলের ভিতরে ঘটে। শুধু তাই নয়, বরং, সময়ের তারতম্য হওয়া, আলোকবর্ষের দুরত্ব চোখের পলকে পার হওয়া এবং দৈর্ঘ সংকোচনের ঘটনা ইত্যাদি সবই ওয়ার্মহোলের বৈশিষ্ট্য।
যারা বলে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কোরআন রচনা করেছেন তাদের কাছে প্রশ্ন তিনি কিভাবে জানলেন ওয়ার্মহোলে সময়ের তারতম্য হওয়া, আলোকবর্ষের দুরত্ব চোখের পলকে পার হওয়া এবং দৈর্ঘ সংকোচন ইত্যাদি ঘটনা ঘটে? তিনি কি এ বিষয়ের উপর গবেষণা করে তারপর এই কোরআন রচনা করেছিলেন? নাউযুবিল্লাহ। কোরআন আল্লাহর বানী।