মহা সম্প্রসারণ এবং মহা সংকোচন (Big Bang & Big Crunch)
বিগব্যাং হবার আগে এই মহা বিশ্বের প্রতিটি বস্তু শুধুমাত্র একটি বিন্দুতে ঘনীভূত ছিল। অতপর এক মহা বিস্ফোরণ হল এবং ঐ বিন্দু থেকে ভর প্রচণ্ড গতিতে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। আর কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আকাশ এবং জমীন একত্রে মিশে ছিল, অতপর আল্লাহ তাদের পৃথক করে দিলেন। কোরআনে (২১:৩০) উল্লেখ করা হয়েছে,
٣٠ أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا ۖ وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ ۖ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ
অর্থঃ এরা কি দেখেনা, আসমানসমূহ ও পৃথিবী একসময় ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল, অতপর আমি এদের উভয়কে আলাদা করে দিয়েছি, এবং আমি প্রাণবান সবকিছুকেই পানি থেকে সৃষ্টি করেছি, (এসব জানার পরও) কি তারা ঈমান আনবেনা?
Do not those who disbelieve see that the heavens and the Earth were meshed together then We (Allah is one and only) ripped them apart? And then We (Allah is one and only) made of water everything living? Would they still not believe?
উপরের আয়াত থেকে বুঝা যায়, আসমানসমূহ ও পৃথিবী একটি বিন্দুতে ঘনীভূত ছিল। বিগব্যাং তত্ত্বও একই কথা বলে। কোরআনে অপর একটি আয়াতে (৫১:৪৭) উল্লেখ করা হয়েছে,
٤٧ وَالسَّمَاءَ بَنَيْنَاهَا بِأَيْدٍ وَإِنَّا لَمُوسِعُونَ
অর্থঃ আমি নিজ হাত দ্বারা আসমান সৃষ্টি করেছি আর আমি অবশ্যই মহা সম্প্রসারঙ্কারী।
And the heaven, We (Allah is one and only) built it with craftsmanship and We (Allah is one and only) are still expanding.
উপরের আয়াত থেকে স্পষ্ট করেই বোঝা যাচ্ছে যে, বিগব্যাং এর পর থেকে এখন পর্যন্ত এই মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে বিজ্ঞানীরা এখন এই সম্প্রসারন নির্নয় করতে পারে। এবার আসুন মহাসংকোচন বা বিগ ক্রাঞ্চ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। মহাসংকোচন বা বিগ ক্রাঞ্চ হল মহা সম্প্রসারণ বা বিগ ব্যঙ্গের উল্টো ঘটনা। বিগ ব্যঙ্গ যেমন চোখের পলকেই বা এক মুহুর্তেই ঘটেছিল ঠিক তেমনি মহাসংকোচন বা বিগ ক্রাঞ্চও চোখের পলকেই বা এক মুহুর্তেই সংঘটিত হবে। বিগব্যং এ যেমন সব সম্প্রসারিত হয়েছে তেমনি বিগ ক্রাঞ্চে সবকিছু সংকুচিত হবে বা গুটিয়ে যাবে। কিন্তু কিভাবে হবে, সেই জ্ঞান শুধু আল্লাহর কাছেই আছে। আমাদের তিনি কোরআনের মাধ্যমে যতটুকু জানিয়েছেন, আমরা শুধু ততটুকুই জানতে পারব। কোরআনে এ বিষয়ে নিন্মের আয়াতে (২১:১০৪) উল্লেখ করা হয়েছে,
١٠٤ يَوْمَ نَطْوِي السَّمَاءَ كَطَيِّ السِّجِلِّ لِلْكُتُبِ ۚ كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ ۚ وَعْدًا عَلَيْنَا ۚ إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ
অর্থঃ (এটা এমন একদিন) যেদিন আমি আসমান সমুহকে গুটিয়ে নেব, ঠিক যেভাবে কেতাবসমুহকে গুটিয়ে ফেলা হয়; যেভাবে আমি একদিন এ সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম, সেভাবেই আমি আবার এর পুনরাবৃত্তি ঘটাবো, এটা (এমন এক) ওয়াদা, (যা) পালন করা আমার উপর জরুরী; আর এ কার্যতো আমি করবোই।
On the day when We (Allah is one and only) will fold the heaven, like the folder compacts the books, and as We (Allah is one and only) originated the first creation We (Allah is one and only) shall return it; a promise (binding on Us); surely We (Allah is one and only) will deliver.
অন্য একটি আয়াতে (৭:১৮৭) এ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে,
١٨٧ يَسْأَلُونَكَ عَنِ السَّاعَةِ أَيَّانَ مُرْسَاهَا ۖ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِنْدَ رَبِّي ۖ لَا يُجَلِّيهَا لِوَقْتِهَا إِلَّا هُوَ ۚ ثَقُلَتْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ لَا تَأْتِيكُمْ إِلَّا بَغْتَةً ۗ يَسْأَلُونَكَ كَأَنَّكَ حَفِيٌّ عَنْهَا ۖ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِنْدَ اللَّهِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
অর্থঃ তারা তোমার কাছে কেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, এ দিনটি কখন সংঘটিত হবে; তুমি তাদের বলো, এ জ্ঞানতো (রয়েছে) আমার মালিকের কাছে, এর সময় আসার আগে তিনি তা প্রকাশ করবেননা, (তবে) আকাশ মণ্ডল ও জমিনের জন্যে সেদিন তা হবে একটি ভয়াবহ (ভারী) ঘটনা, এটি তোমাদের কাছে আসবে একান্ত আকস্মিকভাবেই; (তারা এ প্রশ্নটি এমনভাবে) জিজ্ঞেস করে যে, মনে হয় তুমি বুঝি বিষয়টি সম্পর্কে সবকিছুই জানো; (তাদের) বলো, কেয়ামতের জ্ঞানত তো একমাত্র আল্লাহ তায়ালার কাছেই রয়েছে, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই (এ সত্যটুকু) জানেনা।
They ask you about the Hour, “When will it come?” Say, “Knowledge of it rests with my Lord. None can reveal its coming except He. It weighs heavily on the heavens and the earth. It will not come upon you except suddenly.” They ask you as if you are responsible for it. Say, “Knowledge of it rests with Allah,” but most people do not know.
উপরের আয়াতে ‘ছাকুলাত’ শব্দের অর্থ ভারী হবে বা ভারসাম্য রক্ষা করবে। অর্থ্যাৎ, এখানে মধ্যাকর্ষন শক্তির কথা বোঝানো হচ্ছে যার ফলে আমরা ওজন মাপতে পারি বা ভারসাম্য রক্ষা করতে পারি। আর আপেক্ষিকতার তত্ত্ব থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে, সময়ের বক্রতাই বা সময়ের বেঁকে যাওয়াই হল মধ্যাকর্ষন শক্তি। উপরের একটি আয়াতে বলা হয়েছে কেয়ামত হবে মধ্যাকর্ষন শক্তির মাধ্যমে। এবং শেষের ঠিক আগের আয়াতটিতে বলা হয়েছে মহা সংকোচন হবে বই গুটিয়ে নেয়ার মত করে যা অনেকটা ওয়ার্মহোলের ধারণা দেয় এবং ওয়ার্মহোলের সাথেও মধ্যাকর্ষন শক্তির সম্পর্ক রয়েছে। উপরের শেষ দুইটি আয়াতই মধ্যাকর্ষন শক্তির কথা পরোক্ষভাবে বলছে, যার মাধ্যমে মহাসংকোচন বা বিগ ক্রাঞ্চ হতে পারে।
মহাসংকোচন বা বিগ ক্রাঞ্চ কিভাবে হবে তা কেবল আল্লাহই জানেন। আমরা শুধু ততটুকুই জানি যতটুকু কোরআন থেকে আমরা জানতে পেরেছি। তবে এটুকু বলা হয়েছে যে, ঘটনাটি ঘটবে খুবই তাড়াতাড়ি, এক মুহুর্তে বা চোখের পলকেই। কোরআনে (১৬:৭৭) উল্লেখ আছে,
٧٧ وَلِلَّهِ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ وَمَا أَمْرُ السَّاعَةِ إِلَّا كَلَمْحِ الْبَصَرِ أَوْ هُوَ أَقْرَبُ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
অর্থঃ আসমানসমূহ ও যমীনের যাবতীয় (গায়েব সংক্রান্ত) জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর জন্যেই (নির্দিষ্ট রয়েছে), কেয়ামতের ব্যপারটিতো (তার কাছে) চোখের পলকের চাইতে (বেশি) কিছু নয়, বরং তা তার চাইতেও নিকটবর্তী; আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই সর্ববিষয়ের উপর শক্তিমান।
To Allah belongs the unseen of the heavens and the earth. The coming of the Hour is only as the twinkling of the eye, or even nearer. Allah has power over everything.
মহা সংকোচনের পরে এবং কিয়ামত দিবসের আগে আল্লাহ এই আসমান ও যমীন পুনরায় সৃষ্টি করবেন। এ বিষয়ে কোরআনে (১৪:৪৮) উল্লেখ করা হয়েছে,
٤٨ يَوْمَ تُبَدَّلُ الْأَرْضُ غَيْرَ الْأَرْضِ وَالسَّمَاوَاتُ ۖ وَبَرَزُوا لِلَّهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ
অর্থঃ (প্রতিশোধ হবে সেদিন) যেদিন এ পৃথিবী ভিন্ন (আরেক) পৃথিবী দ্বারা পরিবর্তিত হয়ে যাবে, (একইভাবে) আসমানসমূহ (ভিন্ন আসমানসমূহ দ্বারা বদলে যাবে) এবং মানুষরা সব (হিসাবের জন্যে) এক মহাক্ষমতাধর মালিকের সামনে গিয়ে হাজির হবে।
On the day when Earth will be swapped by another Earth and so will be the heavens; and all (creatures) will resurrect before the One Dominant God.
যখন মহা সম্প্রসারণ বা বিগব্যং হয়েছিল তখন তা হয়েছিল আল্লাহর হুকুমেই। আবার যখন মহা সংকোচন বা বিগ ক্রাঞ্চ হবে তখনও তা হবে আল্লাহর হুকুমেই। আর আল্লাহ যখন কিছু ইচ্ছা করেন তখন শুধু বলেন ‘হও’ আর তা সাথে সাথে হয়ে যায়। এ বিষয়ে কোরআনে (৩৬:৮১-৮৩) উল্লেখ করা হয়েছে,
٨١ أَوَلَيْسَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِقَادِرٍ عَلَىٰ أَنْ يَخْلُقَ مِثْلَهُمْ ۚ بَلَىٰ وَهُوَ الْخَلَّاقُ الْعَلِيمُ
٨٢ إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَقُولَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ
٨٣ فَسُبْحَانَ الَّذِي بِيَدِهِ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيْءٍ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
অর্থঃ যিনি নিজের ক্ষমতাবলে (একবার) আকাশমণ্ডল ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি (পুনরায়) তাদেরই মত কিছু সৃষ্টি করতে সক্ষম নন? (হ্যাঁ), নিশ্চয়ই তিনি মহাশ্রষ্টা ও সর্বজ্ঞ। তিনি যখন কিছু একটা (সৃষ্টি) করতে ইচ্ছা করেন তখন কেবল এইতুকু বলেন ‘হও’- অতপর তা সাথে সাথেই (তৈরী) হয়ে যায়। অতএব পবিত্র ও মহান সে আল্লাহ তায়ালা, যিনি প্রত্যেক বিষয়ের উপর সার্বভৌম ক্ষমতার একচ্ছত্র মালিক এবং তার কাছেই (একদিন) তোমাদের সবাইকে ফিরে যেতে হবে।
Is He not, who created the heavens and the Earth, capable of creating others like them? Yes, indeed! He is the All-Knowing Creator. His command, if He wanted a thing, is that He only says to it, “BE” and it becomes! So glorified is He in whose hands is the dominion of all things, and to Him you shall be returned.
উপরের আয়াতে আল্লাহ যখন কিছু সৃষ্টি করতে চান তখন শুধু বলেন ‘হও’। বিগব্যং বা মহাসম্প্রসারন ও এভাবেই শুরু হয়েছিল। আবার আল্লাহ যখন সবকিছু গুটিয়ে নেবেন তখন তার কাছেই আবার আমাদের সবাইকে ফিরে যেতে হবে। অর্থ্যাৎ, বিগ ক্রাঞ্চ বা মহা সংকোচনও আল্লাহর হুকুমেই হবে।
যারা বলে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কোরআন রচনা করেছেন তাদের কাছে প্রশ্ন তিনি কিভাবে জানলেন মহাবিশ্ব একটি বিন্দু থেকে বিগব্যাঙ্গের মাধ্যমে সৃষ্ট? তিনি কিভাবে জানলেন মধ্যাকর্ষন শক্তির আকর্ষন করার ক্ষমতা সময়ের বক্রতার সাথে সম্পর্কিত? তিনি কিভাবে জানলেন মহা সম্প্রসারণ বা বিগব্যং এবং মহা সংকোচন বা বিগ ক্রাঞ্চ হয়েছিল মুহুর্তের মধ্যেই বা চোখের পলকে? তিনি কি এসব বিষয়ের উপর গবেষণা করে তারপর এই কোরআন রচনা করেছিলেন? নাউযুবিল্লাহ। কোরআন আল্লাহর বানী।