হাইপোক্সিয়া (Hypoxia)
হাইপো অর্থ কমে যাওয়া এবং অক্সিয়া অর্থ অক্সিজেন। অর্থ্যাৎ হাইপোক্সিয়া শব্দের অর্থ হল অক্সিজেন কমে যাওয়া। হাইপোক্সিয়া একটি অসুখ যা অক্সিজেনের অভাবে হয়ে থাকে। মানুষের রক্তে যখন অক্সিজেন কমে যায় তখন ফুসফুস সংকুচিত হয় এবং বুক শক্ত ও প্রসস্থ হয়ে আসে। এ বিষয়টি কোরআনে (৬:১২৫) উল্লেখ করা হয়েছে।
١٢٥ فَمَنْ يُرِدِ اللَّهُ أَنْ يَهْدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلْإِسْلَامِ ۖ وَمَنْ يُرِدْ أَنْ يُضِلَّهُ يَجْعَلْ صَدْرَهُ ضَيِّقًا حَرَجًا كَأَنَّمَا يَصَّعَّدُ فِي السَّمَاءِ ۚ كَذَٰلِكَ يَجْعَلُ اللَّهُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ
অর্থঃ আল্লাহ কাউকে সৎ পথে পরিচালিত করতে চাইলে তিনি তার হৃদয়কে ইসলামের জন্য খুলে দেন, আবার যাকে তিনি বিপথগামী করতে চান তার হৃদয়কে অতিশয় সংকীর্ন করে দেন, (তার পক্ষে ইসলামের অনুসরণ করা এমন কঠিন হয়) যেন কোন একজন ব্যক্তি আকাশে চড়তে চাইছে; আর যারা (আল্লাহর উপর) বিশ্বাস করেনা, আল্লাহ এভাবেই তাদের উপর (অপমানজনক লাঞ্ছনা ও) নাপাকী ছেয়ে দেন।
Those whom Allah wants to guide, He opens their chests to Islam; And those whom He wants to leave astray, He makes their chests tight and constricted, as if they are ascending to the sky: Such is the penalty of Allah on those who refuse to believe.
মাটি থেকে আকাশের দিকে উঠতে গেলে যতই উপরের দিকে উঠবেন ততই অক্সিজেনের পরিমান কমতে থাকবে। ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হবে। ফলে রক্তে অক্সিজেন কমে যাবে। এবং এ কারণে ফুসফুস সংকুচিত হবে। ঐ আমলে উড়োজাহাজ আবিষ্কৃত হয়নি। সুতরাং উপরের দিকে যেতে থাকলে যে অক্সিজেন কমতে থাকে, এ কথা কেউই জানতোনা। উপরের আয়াতে হৃদয়কে অতিশয় সংকীর্ন করা হবে বলতে বুঝানো হয়েছে শ্বাস নিতে কষ্ট হবে। অর্থ্যাৎ, হাইপোক্সিয়া অসুখের কথা পরোক্ষভাবে বলা হয়েছে।
হাইপোক্সিয়া অসুখের আর একটি লক্ষণ হল অক্সিজেনের অভাবে চোখ ও শরীরের ত্বকের রঙ নীল হয়ে যায়। কিন্তু এ বিষয়ে কোরআনে (২০:১০২) উল্লেখ করা হয়েছে প্রায় ১৪৫০ বছর আগে।
١٠٢ يَوْمَ يُنْفَخُ فِي الصُّورِ ۚ وَنَحْشُرُ الْمُجْرِمِينَ يَوْمَئِذٍ زُرْقًا
অর্থঃ যেদিন শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেওয়া হবে সেদিন আমি অপরাধীদের এমন অবস্থায় জড়ো করব, ভয়ে তাদের চোখ নীল (ও দৃষ্টিহীন) থাকবে।
On the Day when the Trumpet is blown, We will gather the sinners on that day, blue.
হাইপোক্সিয়ার ও মানসিক চাপে মানুষের চোখ এবং ত্বক নীল রঙয়ের হয়ে যায় যা কোরআনে উল্লেখ আছে।
মস্তিষ্কের কাজ সুন্দরভাবে হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেনের সরবরাহ প্রয়োজন। অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্কের মোটর ফাংশনের কাজে বিঘ্ন ঘটে। ফলে চলাফেরা এবং নড়াচড়ায় সমস্যা দেখা দেয়। এক পা অন্য পায়ের সাথে জড়িয়ে যায়। কোরআনে (৭৫:২৯) এ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
٢٩ وَالْتَفَّتِ السَّاقُ بِالسَّاقِ
অর্থঃ আর এভাবেই তার এ জীবনের শেষ পা পরের জীবনের প্রথম পায়ের সাথে জড়িয়ে যাবে।
And the leg is entwined with other leg.
ধর্মীয় পরিভাষায় দুই পা জড়িয়ে যাবার অর্থ হল এ জীবনের শেষ পা পরের জীবনের প্রথম পায়ের সাথে জড়িয়ে যাবে। আর অন্যদিকে, মেডিকেল পরিভাষা অনুযায়ী, ইহকালেই এক পা অন্য পায়ের সাথে জড়িয়ে যাবে, ফলে চলাফেরায় ও নড়াচড়ায় সমস্যা হবে। এটিও হাইপোক্সিয়ার একটি লক্ষণ।
অন্য একটি আয়াতে কেয়ামতের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে মানুষের মাথা ঘুরানো, নেশাগ্রস্থতা বা মাতলামির কথা বলা হয়েছে। মাথা ঘুরানো, নেশাগ্রস্থতা বা মাতলামিও হাইপোক্সিয়া রোগের একটি লক্ষণ। কোরআনে (২২:২) উল্লেখ করা হয়েছে,
٢ يَوْمَ تَرَوْنَهَا تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّا أَرْضَعَتْ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا وَتَرَى النَّاسَ سُكَارَىٰ وَمَا هُمْ بِسُكَارَىٰ وَلَٰكِنَّ عَذَابَ اللَّهِ شَدِيدٌ
অর্থঃসেদিন তোমরা তা নিজেরা দেখতে পাবে, (দেখবে) বুকের দুধ খাওয়ানো হচ্ছে এমন প্রতিটি নারী (ভয়াবহ আতংকে) তার দুগ্ধপোষ্যকে ভুলে যাবে, প্রতিটি গর্ভবতী (জন্তু) তার(গর্ভস্থিত বস্তুর) বোঝা ফেলে দিবে, মানুষকে যখন তুমি দেখবে তখন (তোমার) মনে হবে, তারা বুঝি কিছু নেশাগ্রস্থ মাতাল, কিন্তু তারা আসলে কেউই নেশাগ্রস্থ নয়; বরং (এটা হচ্ছে একধরনের আযাব,) আল্লাহ তায়ালার আযাব কিন্তু অত্যন্ত ভয়াবহ।
When you will see it [final Hour] every nursing mother will discard her infant, and every pregnant woman will miscarry, and you will see the people drunk, even though they are not drunk. but the punishment of Allah is severe.
অক্সিজেনের অভাব বেশি হলে অনেক সময় সাময়িক অন্ধত্ব দেখা দেয়। কেয়ামতের সময়ও হয়ত প্রচণ্ড মানসিক চাপে অক্সিজেনের অভাবে মানুষেরা অন্ধ হয়ে উঠবে। কিন্তু কোরআনে (২০:১২৪) এ বিষয়ে নিশ্চিত করা হয়েছে যে অবিশ্বাসীরা কেয়ামতের দিন অন্ধ হয়ে উঠবে। কেয়ামত আগুনের সাথে সম্পর্কিত। আর আগুন বেশি হলে সেখানে বাতাসের অক্সিজেন আগুনে পুড়ে কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরী হয়। ফলে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। কেয়ামতের দিন অক্সিজেনের অভাব দেখা দিবে কিনা তা কোরআনে সরাসরি বলা নেই কিন্তু বলা আছে যে অবিশ্বাসীরা অন্ধ হয়ে উঠবে আর হাইপোক্সিয়ার কারণে মানুষ সাময়িক ভাবে অন্ধও হয়ে যেতে পারে। কোরআনে (২০:১২৪) এ বিষয়েও উল্লেখ করা হয়েছে।
١٢٤ وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَىٰ
অর্থঃ যে ব্যক্তি আমার স্মরন থেকে বিমুখ হবে তার জন্যে (জীবনে) বাচার সামগ্রী সংকুচিত হয়ে যাবে, সর্বোপরি তাকে আমি কেয়ামতের দিন অন্ধ বানিয়ে হাজির করব।
But whoever turns away from My Reminder, for him is a confined life. And We (Allah is one and only) will raise him on the Day of Resurrection blind.
হাইপোক্সিয়ার কারণে কণ্ঠনালী বা খাদ্যনালী শুকিয়ে যায়। ফলে খাবার গিলতে কষ্ট হয়। কোরআনে (১৪:১৬-১৭) হাইপোক্সিয়া রোগের কথা হয়ত সরাসরি বলা নেই কিন্তু গলধকরনে বা গিলতে কষ্ট হবার কথা বলা হয়েছে।
١٦ مِنْ وَرَائِهِ جَهَنَّمُ وَيُسْقَىٰ مِنْ مَاءٍ صَدِيدٍ١٧ يَتَجَرَّعُهُ وَلَا يَكَادُ يُسِيغُهُ وَيَأْتِيهِ الْمَوْتُ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ وَمَا هُوَ بِمَيِّتٍ ۖ وَمِنْ وَرَائِهِ عَذَابٌ غَلِيظٌ
অর্থঃ তার পেছনেই রয়েছে জাহান্নাম, সেখানে তাকে গলিত পুঁজ জাতীয় পানি পান করানো হবে। সে অতি কষ্টে তা গলধকরন করতে চাইবে, কিন্তু গলধকরন করা তার পক্ষে কোন মতেই সম্ভব হবেনা, উপরন্তু চারিদিক থেকেই তার উপর মৃত্যু আসবে, কিন্তু সে কোন মতেই মরবেনা, বরং তার পেছনে থাকবে (আরও) কঠোর আযাব।
Behind him lies Hell, and he will be given to drink putrid water. He will guzzle it, but will barely swallow. Death will come at him from every direction, but he will not die. And beyond this is relentless suffering.
সেদিন তাদের কাঁটাযুক্ত খাবার খেতে দেয়া হবে। তারা তা খেতে চাইবে। কিন্তু গলধকরন করতে পারবে না। এ বিষয়েও কোরআনে (৮৮:৬) একটি আয়াত আছে।
٦ لَيْسَ لَهُمْ طَعَامٌ إِلَّا مِنْ ضَرِيعٍ
অর্থঃ খাবার হিসেবে কাঁটাযুক্ত গাছ ছাড়া কিছুই তাদের জন্য থাকবেনা।
They will have no food except thorns.
কাঁটাযুক্ত গাছ খেতে গেলে তা গিলতে কষ্ট হবে। গলায় আটকে যাবে। আর হাইপোক্সিয়ার কারণেও গলা, কণ্ঠনালী বা খাদ্যনালী শুকিয়ে গেলেও খাবার গিলতে কষ্ট হয়। কেয়ামতের কঠিন দুর্যোগময় পরিস্থিতি কল্পনা করা কঠিন কিন্তু মেডিকেলের পরিভাষায় উপরের সবকয়টি কষ্টকর অবস্থা ও (শ্বাসকষ্ট, নড়াচড়ায় সমস্যা, শরীর নীল হয়ে যাওয়া, নেশাগ্রস্থ বা মাতাল ভাব, সাময়িক অন্ধত্ব, খাদ্য গিলতে কষ্ট ইত্যাদি) সবগুলো লক্ষণই হাইপোক্সিয়া রোগ হলে দেখা যায়। কেয়ামতের শাস্তিগুলো মানুষের হাইপোক্সিয়া নামক রোগের লক্ষণের সাথে মিলে যায়।
যারা বলে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কোরআন রচনা করেছেন তাদের কাছে প্রশ্ন তিনি কিভাবে জানলেন হাইপোক্সিয়া রোগের লক্ষণসমুহ? তিনি কি একজন চিকিৎসা বিজ্ঞানী ছিলেন এবংএ বিষয়ের উপর গবেষণা করে তারপর এই কোরআন রচনা করেছিলেন? নাউযুবিল্লাহ। কোরআন আল্লাহর বানী।