সাত আসমান (Seven Heavens)
আমরা চার মাত্রার জগতের বস্তু দেখতে পাই। এই চারটি মাত্রা হল, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা এবং সময়। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের স্ট্রিং এর তত্ত্ব অনুযায়ী আরও ছয়টি মাত্রা আছে। তবে বিজ্ঞানের এই শাখাগুলোর বেশিরভাগ তথ্যই অনুমান নির্ভর। প্রথম চারটি মাত্রা হল দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা এবং সময়। এই চার মাত্রা দিয়েই সাত আসমানের সবচেয়ে নিচের আসমানটি তৈরী। এবং এই নিচের আসমানটি আমাদের কাছে দৃশ্যমান। বাকী ছয় আকাশের বস্তুগুলো আমরা দেখতে পাইনা। বাকী ছয় আকাশের প্রত্যেক আকাশের মাত্রা ভিন্ন এবং তাতে আলাদা আলাদা বস্তু আছে। এভাবে ছয় আকাশের ছয় মাত্রা এবং সবথেকে নিচের আকাশে চার মাত্রা আছে। এভাবে মোট (৬+৪ = ১০) দশটি মাত্রা আছে। সাত আসমানের একটি আরেকটির উপর জড়িয়ে আছে। একই স্থানে অনেকগুলো মাত্রা থাকলে সেখানেই মাল্টিভার্সের ধারনা সৃষ্টি হয়। আর অনেকগুলো মহাবিশ্ব যখন সমান্তরালে কল্পনা করা হয় তখন তাকে প্যারালাল ওয়ার্ল্ড বা সমান্তরাল মহাবিশ্ব বলে।
আমরা অনেকেই ডার্কমেটার বা মহাকাশের অদৃশ্য শক্তির উপস্থিতি সম্পর্কে জানি। সম্প্রতি, মহাকাশের বিজ্ঞানীরা ডার্কমেটার উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন। ডার্কমেটার দেখা যায়না। কিন্তু এটি এমন এক শক্তি, যা মহাবিশ্বের সকল ছায়াপথগুলোকে ধরে রেখেছে বা ঝুলিয়ে রেখেছে। ডার্কমেটার এক ধরনের অদ্ভুত শক্তি। সাধারনত, সকল বস্তুই সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। কিন্তু, ডার্কমেটার কখনও সংঘর্ষে লিপ্ত হয় না। ডার্কমেটার দেখাও যায়না, ডার্কমেটার দিয়ে কোন কিছুকে আঘাতও করা যায়না কিন্তু, ডার্কমেটারের আকর্ষন করার শক্তি আছে। এদের মাত্রা ভিন্ন, তাই এদের আমরা খালি চোখে দেখতে পাইনা। নিন্মের চিত্রে দুইটি ডার্কমেটারের (দুটি নীল) মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে।
অনেকগুলো গ্রহ মিলে একটি সৌরজগত। অনেকগুলো সৌরজগত মিলে একটি ছায়াপথ। আবার অনেকগুলো ছায়াপথ মিলে একটি গ্যালাক্সি ফিলামেন্ট। আবার, অনেকগুলো গ্যালাক্সি ফিলামেন্ট মিলে একটি ক্লাস্টার।
উপরের চিত্রে দুইটি আলাদা ক্লাস্টার হাইড্রোজেন সহ সম্প্রসারিত হচ্ছে। এরা পরস্পর বিপরীত দিক থেকে আসছে বলে এদের মধ্যে সংঘর্ষ হবে। পর্যবেক্ষনে দেখা যায়, এই দুই ক্লাস্টারের মাধ্যমে বহন করা হাইড্রোজেনের মধ্যে সংঘর্ষ হয় ঠিকই, কিন্তু ব্ল্যাক মেটারের মধ্যে কোন সংঘর্ষ হয়না। এরা একটি অন্যটির ভিতর দিয়ে অনায়াসে চলে যায়। ব্ল্যাক মেটার দেখা যায়না, সংঘর্ষ করেনা কিন্তু এদের আকর্ষণ বলের মাধ্যমে মহাকাশে এদের চিহ্নিত করা যায়।
١٥ فَلَا أُقْسِمُ بِالْخُنَّسِ
কোরআনেও (৮১:১৫-১৬) মহাকাশের অদৃশ্য বস্তু সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে।
অর্থঃ শপথ সেসব তারকা পুঞ্জের যা (চলতে চলতে) গা ঢাকা দেয়। (আবার) যা (মাঝে মাঝে) অদৃশ্য হয়ে যায়।
I swear by those that are invisible (Khunnas خنس), that move, that sweep.
ডার্ক মেটার দেখা যায়না, তবে নড়াচড়া করে এবং হাইড্রোজেন বহন করে চলে। পদার্থবিদ ও মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মতে, আমরা চার মাত্রার জগতের বস্তু দেখতে পাই। এই চারটি মাত্রা হল, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা এবং সময়। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান আরও ছয়টি মাত্রার প্রমান পেয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, আমরা ডার্ক মেটার দেখতে পারিনা কারণ, ডার্ক মেটারের বস্তুগুলো বাকী ছয় মাত্রায় আছে।
কোরআন অনুযায়ী, আমরা ফেরেশতা ও জীনদের দেখতে পারিনা, তাদেরকে ধরতে পারিনা কিন্তু তাদের ওজন আছে। আর ওজন আছে মানে ভর আছে (F = mg)। তবে এই ভর আছে অন্য মাত্রায় আছে। আর এজন্যই আমরা তাদের দেখতে পারিনা এবং তাদের সাথে সংঘর্ষও করতে পারিনা। কোরআনে (৫৫:৩১) এ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
٣١ سَنَفْرُغُ لَكُمْ أَيُّهَ الثَّقَلَانِ
অর্থঃ দায়িত্বের ভারে ভারাক্রান্ত (ওহে মানুষ ও জীন), (এর মাঝেও কিন্তু) আমি তোমাদের (হিসাব নেয়ার) জন্যে অচিরেই সময় বের করে নেব।
We (Allah is one and only) will settle your affair, both you of weight (man and jinn)
উপরের আয়াতে ‘ছাকালান’ অর্থ ভার (দ্বিবচন অর্থ্যাৎ মানুষ ও জীন উভয়ের জন্য)। অর্থ্যাৎ জীনদের ওজন আছে সামান্য হলেও কিন্তু তা আছে অন্য মাত্রায় আর এজন্য আমরা তাদের দেখতে পাইনা, সংঘর্ষও করতে পারিনা। কিন্তু আমরা তাদের মাত্রার মধ্যাকর্ষন অনুভব করতে পারি এবং তারাও আমাদের মাত্রার মধ্যাকর্ষন অনুভব করতে পারে। ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার ভর ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলো আলাদা আলাদা। তবে মধ্যাকর্ষনই কেবল বিভিন্ন মাত্রার মধ্যে কমন বা সাধারন বস্তু।
আমাদের দৃশ্যমান কাছের আকাশের উপর আরও ছয়টি আকাশ আছে। জীনরা যেমন অদৃশ্য ঠিক তেমনি ঐ ছয়টি আকাশের বস্তুগুলোও অদৃশ্য। আমরা তাদের দেখতে পারিনা, সংঘর্ষও করতে পারিনা কিন্তু তাদের মধ্যাকর্ষন বল অনুভব করতে পারি। কোরআনে (৪১:১২) এ সংক্রান্ত একটি আয়াতে আছে।
١٢ فَقَضَاهُنَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ فِي يَوْمَيْنِ وَأَوْحَىٰ فِي كُلِّ سَمَاءٍ أَمْرَهَا ۚ وَزَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَحِفْظًا ۚ ذَٰلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ
অর্থঃ (এই) একই সময়ে তিনি দুদিনের ভিতর (ধুম্রকুঞ্জকে) সাত আসমানে পরিনত করলেন, এবং প্রতিটি আকাশে তার (উপযোগী) আদেশনামা পাঠালেন; পরিশেষে আমি নিকটবর্তী আসমানকে তারকারাজি দ্বারা সাজিয়ে দিলাম এবং (তাকে শয়তান থেকে) সংরক্ষিত করে দিলাম, এসব (পরিকল্পনা) অবশ্যই পরাক্রমশালী ও সর্বজ্ঞ আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক (আগে থেকেই) সুবিন্যস্ত করে রাখা হয়েছিল।
Allah is the one who created seven Heavens and from Earth like them (of corresponding type); [Allah’s] command descends among them so that you may know that Allah is capable of anything and that Allah knows everything.
আমাদের সবচেয়ে নিকটবর্তী দৃশ্যমান আকাশের বাইরে যে ছয় আকাশ আছে, সেখানেও পৃথিবীর মত গ্রহ আছে। জীনদের মাত্রা ভিন্ন তাই আমরা তাদের দেখতে পারিনা। ঠিক তেমনি বাকী ছয় আকাশের এবং সেই ছয় আকাশের বস্তুগুলোর মাত্রাও ভিন্ন আর এজন্যই স্বাভাবিক দৃষ্টি দিয়ে আমরা সেগুলো দেখতে পাইনা।
যারা বলে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কোরআন রচনা করেছেন তাদের কাছে প্রশ্ন তিনি কিভাবে ওই আমলে ধারনা করেছিলেন জীন জাতির এবং বাকী ছয় আকাশের অদৃশ্য বস্তুগুলোর, যাদের মাত্রা ভিন্ন হবার কারণে আমরা তাদের দেখতে পাইনা? তিনি কি এ বিষয়ের উপর গবেষণা করে তারপর এই কোরআন রচনা করেছিলেন? নাউযুবিল্লাহ। কোরআন আল্লাহর বানী।