লোহা (Iron)
প্রত্যেকটি পদার্থের পরমানু ভাঙলে কেন্দ্রে নিউক্লিয়াস পাওয়া যায়, যেখানে প্রোজিট্রন ও নিউট্রন থাকে। আর ইলেকট্রনগুলো কেন্দ্রের চারিদিকে ঘুরে। তবে সকল পদার্থের মধ্যে লোহার কেন্দ্রই সবচেয়ে শক্তিশালী। লোহার একটি পরমানু সৃষ্টির জন্য যে পরিমান শক্তি ও তাপের প্রয়োজন হয়, তা আমাদের এই সম্পুর্ন সৌরজগতের সকল শক্তি মিলিয়ে একত্র করলেও পাওয়া যাবেনা। এজন্যই বিজ্ঞানীরা বলেন যে, আমাদের পৃথিবীতে যে লোহা পাওয়া যায়, তা আমাদের এ পৃথিবীতে তৈরী হয়নি। বরং, সৌরজগতের বাইরের কোন জায়গা থেকে লোহা গ্রহানুপুঞ্জের মত ছুটে এসে পৃথিবীতে আঘাত করে। তারপর লোহা পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পরে এবং মুল অংশ পৃথিবীর কেন্দ্রে চলে যায়। কোরআনেও উল্লেখ করা হয়েছে যে, আল্লাহ লোহা নাযিল করেছেন। নাযিল শব্দের অর্থ হল বাইরে থেকে কিছু পাঠানো। অর্থ্যাৎ, লোহা এই পৃথিবীতে তৈরী হয়নি বরং আল্লাহ পৃথিবীর বাইরে থেকে লোহা পাঠিয়েছেন।
লোহার পারমানবিক সংখ্যা হল ২৬ এবং আরবীতে প্রতিটি শব্দের গানিতিক মান বের করার একটি পদ্ধতি আছে। সেই পদ্ধতি অনুযায়ীও লোহা শব্দটির গানিতিক মান হল ২৬।
একই গোলাপ ফুল যেমন অনেক রঙের হতে পারে কিন্তু তাদের রংগুলো আলাদা হয়। ঠিক একই ভাবে, একই লোহা আবার চার রকমের হতে পারে। এদের আইসোটপ বলে। এরা হল, 54Fe, 56Fe, 57Fe and 58Fe এবং এদের মধ্যে একটি হল ৫৭। আর কোরআনের সূচিপত্রে খুঁজলে আবাক হবেন যা, ৫৭ নম্বর সুরাটিই হল সুরা হাদীদ।
আবার, সম্পুর্ন কোরআনে মোট সুরা আছে ১১৪ টি। আর সুরা হাদীদ হল ৫৭ নম্বর সুরা। অর্থ্যাৎ, সুরা হাদীদ কোরআনের ঠিক মাঝখানের সুরা। এজন্য অনেকের ধারনা পৃথিবীর একদম কেন্দ্রেও লোহা আছে। আবার, কোরাআনের শুরু থেকে যে আয়াতে লোহার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সে আয়াত পর্যন্ত মোট ৫১০০ টি আয়াত আছে। এজন্য অনেকের ধারনা পৃথিবীর উপরের পৃষ্ঠ থেকে কেন্দ্রের দিকে ৫১০০ কিলোমিটার ঢুকতে পারলে লোহার স্তর পাওয়া যেতে পারে। আল্লাহ্ই ভাল জানেন।
কোরআনে (৫৭:২৫) লোহার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
٢٥ لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنْزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ ۖ وَأَنْزَلْنَا الْحَدِيدَ فِيهِ بَأْسٌ شَدِيدٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ مَنْ يَنْصُرُهُ وَرُسُلَهُ بِالْغَيْبِ ۚ إِنَّ اللَّهَ قَوِيٌّ عَزِيزٌ
অর্থঃ আমি অবশ্যই আমার রাসুলদের কতিপয় সুস্পষ্ট নিদর্শন সহ (মানুষের কাছে) পাঠিয়েছি, এবং আমি তাদের সাথে কেতাব পাঠিয়েছি, আরও পাঠিয়েছি (আমার পক্ষ থেকে এক) ন্যায়দণ্ড, যাতে করে মানুষ (এর মাধ্যমে) ইনসাফের উপর কায়েম থাকতে পারে, তাদের জন্য আমি লোহা নাযিল করেছি, যার মধ্যে (একদিকে যেমন রয়েছে) বিপুল শক্তি, (অন্যদিকে রয়েছে) মানুষের বহুবিধ উপকার, এর মাধ্যমে (মূলত) আল্লাহ তায়ালা জেনে নিতে চান কে আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসুলদের না দেখেও সাহায্য করতে এগিয়ে আসে, আল্লাহ তায়ালা প্রচণ্ড শক্তিমান ও মহা পরাক্রমশালী।
… and We (Allah is one and only) sent down Iron, in it great might…
যারা বলে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কোরআন রচনা করেছেন তাদের কাছে প্রশ্ন তিনি কিভাবে জানলেন লোহা পৃথিবীর বাইরে থেকে এসেছে এবং লোহায় আছে প্রচণ্ড শক্তি? তিনি কি এ বিষয়ের উপর গবেষণা করে তারপর এই কোরআন রচনা করেছিলেন? নাউযুবিল্লাহ। কোরআন আল্লাহর বানী।