পৃথিবীর (Earth)
আগের দিনের মানুষেরা ভাবত পৃথিবী সমতল। কিন্তু, আসলে পৃথিবীর আকৃতি যে গোলাকার তা তারা জানত না। কিন্তু কোরআনে এ বিষয়ে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ উভয়ভাবেই বলা হয়েছে। কোরআনে (৩৯:০৫) এ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُسَمًّى أَلَا هُوَ الْعَزِيزُ الْغَفَّارُ (5)
অর্থঃ তিনি আসমান ও যমীন সুপরিকল্পিতভাবেই সৃষ্টি করেছেন, তিনি রাতকে দিনের উপর লেপটে দেন আবার দিনকে রাতের উপর লেপটে দেন, তিনিই সুর্য ও চন্দ্রকে (একটি নিয়মের) অধীন করে রেখেছেন, এগুলো সবই একটি সুনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (নিজ নিজ কক্ষপথে) বিচরণ করতে থাকবে; জেনে রেখো, তিনি পরাক্রমশালী এবং পরম ক্ষমাশীল।
He created the heavens and earth in truth. He wraps the night over the day and wraps the day over the night and has subjected the sun and the moon, each running [its course] for a specified term. Unquestionably, He is the Exalted in Might, the Perpetual Forgiver.
উপরের আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি রাতকে দিনের উপর লেপটে দেন আবার দিনকে রাতের উপর লেপটে দেন। আর এই ঘটনা তখনই সম্ভব হবে যখন পৃথিবী গোলাকার হবে। পৃথিবী পয়সার মত আকৃতির হলে অথবা ঘনক বা বাক্সের মত আকৃতির হলে হঠাৎ করেই দিন হত আবার হঠাৎ করেই রাত হত।
আবার, আগের দিনে মানুষ ভাবত সুর্য স্থির থাকে এবং বাকী সব গ্রহ এবং উপগ্রহগুলো সুর্যকে কেন্দ্র করে নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরছে। কিন্তু বাস্তবে সুর্যের ও একটি কক্ষপথ আছে তা আমরা আধুনিক বিজ্ঞান থেকে জানতে পারি। উপরের আয়াতেও বলা হয়েছে সুর্য ও চন্দ্র উভয়েই বিচরণ করে। অর্থ্যাৎ, সুর্য স্থির নয়।
অন্য একটি আয়াতে (৫৫:৩৩) বলা হয়েছে,
يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ إِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ تَنْفُذُوا مِنْ أَقْطَارِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ فَانْفُذُوا لَا تَنْفُذُونَ إِلَّا بِسُلْطَانٍ (33)
অর্থঃহে জীন ও মানব সম্প্রদায়, যদি আকাশমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের এ সীমারেখা তোমাদের অতিক্রম করার সাধ্য থাকে তাহলে (যাও! অতপর) তা অতিক্রম করেই দেখ;(কিন্তু আমার দেয়া বিশেষ) ক্ষমতা ছাড়া তোমরা কিছুতেই (এ সীমা) অতিক্রম করতে পারবেনা।
O company of Jinn and man, escape the diameters (اقطار) of the Heavens and the Earth if you can, You won’t escape without authority.
উপরের আয়াতে বলা হয়েছে, আকাশ এবং পৃথিবীর নির্দিষ্ট সীমা আছে, যা জীন ও মানুষ কখনই অতিক্রম করতে পারবেনা। আমরা যে আকাশ দেখতে পাই তা হল আল্লাহর সৃষ্টির সাত আকাশের সবচেয়ে কাছের আকাশ। এই আকাশই এত বিশাল যে বিজ্ঞানীদের মতে, মানুষ ও জিন এই আকাশের সীমাই অতিক্রম করতে পারবেনা। বাকী ছয় আসমান অতিক্রম করা তো দুরের কথা। আবার অন্যদিকে মানুষ পৃথিবীর কেন্দ্রে যেতে চাইলেও সেখানে পৌঁছাতে পারবে না। বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর কেন্দ্রে অনেক কিছু পাঠাতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু লাভার প্রচণ্ড উত্তাপে তার সবকিছুই জ্বলে গেছে।
উপরের আয়াতে ‘আকতারি’ শব্দের অর্থ হল ব্যাস। আর ব্যস কেবল বৃত্তেরই হতে পারে। সুতরাং, এই আয়াতে পরোক্ষভাবে বুঝানো হয়েছে পৃথিবীর আকৃতি এবং মহাকাশের আকৃতি গোলাকার এবং তার ব্যস আছে।
আরও একটি আয়াতে (৭৯:৩০) পৃথিবীর আকৃতির কথা প্রত্যক্ষভাবে বা সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَلِكَ دَحَاهَا (30)
অর্থঃ এরপর পৃথিবীকে তিনি ডিম্বাকৃতি করে তৈরী দিয়েছেন।
উপরের আয়াতে ‘দাহাহা’ শব্দের অর্থ উট পাখির ডিমকে বুঝায়। কোরআনে ঠিকই বলা হয়েছে। পৃথিবী কিন্তু একেবারে গোলাকার নয়। উপরে এবং নিচের দিকে কিছুটা চ্যাপ্টা। অনেকটা উট পাখির ডিমের মত। এবং পৃথিবী চলার জন্য একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথ আছে। ঐ কক্ষপথ দিয়ে পৃথিবী সুর্যকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করছে।
যারা বলে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কোরআন রচনা করেছেন তাদের কাছে প্রশ্ন তিনি কিভাবে জানলেন পৃথিবী এবং মহাকাশ গোলাকার? তিনি কি এখনকার মত রকেটে করে পৃথিবীর উপর গিয়েছিলেন এবং তারপর এ বিষয়ের উপর গবেষণা করে এই কোরআন রচনা করেছিলেন? নাউযুবিল্লাহ। কোরআন আল্লাহর বানী।